কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে সোয়াইন ফ্লু। স্বাস্থ্য দফতর সুত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার থেকে আক্রান্তদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেক দিন লাফিয়ে বাড়ছে রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার সংখ্যাটা ছিল ১৭। শনিবার আরও পাঁচ জনের খোঁজ মিলেছে। তাদের মধ্যে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আড়াই বছরের এক শিশুও রয়েছে। তাকে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই নিয়ে বিসি রায়ে দু’জন সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্ত শিশু ভর্তি হল।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা ৫২ বছরের এক ভদ্রলোক। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শনিবার পর্যন্ত রাজ্যে যে ২২ জন আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬ জন কলকাতার বাসিন্দা। বাকি ১৬ জন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অধিবাসী। জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারাই স্বীকার করেছেন যে, এর থেকে প্রমাণ হয় সব জেলাতেই কমবেশি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। আক্রান্ত ২২ জনই কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে শনিবার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। নতুন করে যে পাঁচ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল। শুক্রবার ঐশী রায় নামে যে শিশুকে আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তাকে শনিবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত বাড়িতেই তার চিকিৎসা হবে। স্বাস্থ্যসচিবের কথায়, “যাঁদের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন নেই এবং শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি রাখার দরকার নেই। বাড়িতেই তাঁদের চিকিৎসা হতে পারে।” সোয়াইন ফ্লুয়ের ওষুধ ট্যামি ফ্লুয়ের কোনও অভাব নেই বলে এ দিনও আশ্বাস দিয়েছেন মলয়বাবু। তবে বিসি রায় এবং আইডি হাসপাতাল দু’ জায়গার চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম মতো আগে থেকে হাসপাতালে ট্যামি ফ্লু মজুত রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। এক-এক জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন আর তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বার-বার ওষুধ আনতে স্বাস্থ্যভবন ছুটতে হচ্ছে। এতে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
বিসি রায় হাসপাতালে শনিবার থেকে সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্ত শিশুদের রাখার জন্য আলাদা তিন শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। তিনটি শয্যার সঙ্গেই ভেন্টিলেটর রয়েছে। এত দিন সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্তদের বিসি রায়ের ‘পেডিয়াট্রিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’-এ অন্য গুরুতর অসুস্থদের সঙ্গে রাখা হচ্ছিল। তা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেই আপত্তি ওঠায় এই ব্যবস্থা। আপাতত বিসি রায়ে ভর্তি দু’টি শিশুর মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্য জন ভাল আছে।
বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি রাজস্থানে। সে রাজ্যে গত দু’দিনে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়ে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজস্থানে সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৮১। মৃত্যু হয়েছে ১৪২ জনের। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতও সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি আপাতত সুস্থ। এ বছর ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬২৯৮ জন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। মারা গিয়েছেন ৪৮৫ জন। মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, গাজিয়াবাদ-সহ নানা শহর থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
দিন কয়েক আগে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। নাম রুশদা পারভেজ। গত সপ্তাহে রুশদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৫ জন পড়ুয়ার সঙ্গে শিক্ষামূলক ভ্রমণে দক্ষিণ ভারত গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরেই তাঁর শরীরে সোয়াইন ফ্লুয়ের উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁকে ভর্তি করা হয় আলিগড়ের জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ছাত্রীটিকে দিল্লির এইমসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তার আগেই, গত কাল রাতে ছাত্রীটি মারা যান। তাঁর আরও ৭ সহপাঠীরও সোয়াইন ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।