কলকাতার হাসপাতালে আর এক রোগীর শরীরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই)-এর জীবাণু পাওয়া গেল। ওঁকে নিয়ে মহানগরীর সরকারি হাসপাতালে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের পাঁচ জন রোগী ভর্তি। সকলেই অবশ্য শহরের বাইরে থেকে রোগটি নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
জ্বর নিয়ে শুক্রবার শিয়ালদহের বিআর সিংহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অশোক যাদব। ৩৯ বছরের ওই রেলকর্মীর বাড়ি হুগলি জেলায়, কর্মসূত্রে অসমে থাকেন। সেখানেই সপ্তাহখানেক আগে তাঁর জ্বর আসে। তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিন পরে, সোমবার অশোকবাবুর রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে জেই মিলেছে। কিছু দিন আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জেই-তে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মী অসম থেকেই রোগ এনেছিলেন।
এই মুহূর্তে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও চার জন জেই-রোগীর চিকিৎসা চলছে। পাশাপাশি বিআর সিংহে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ (এইএস) নিয়ে ভর্তি রয়েছেন সাধন পাল নামে এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী, তাঁরও বাড়ি হুগলি জেলায়। স্বাস্থ্যভবনের খবর, চলতি মরসুমে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এইএসের রোগী এলেও হুগলি থেকে এর আগে পাওয়া যায়নি। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, বর্ধমান ও বাঁকুড়ায় ইতিমধ্যে কিছু মানুষ খিঁচুনি-জ্বরের কবলে পড়েছেন।
একই সঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ রক্তে জেই-র ভাইরাস চিহ্নিতকরণের পরীক্ষা-কিটের মজুত সরকারি হাসপাতালে দিন-কে-দিন কমছে। মালদহ হাসপাতালে তো কিটের অভাবে রক্ত পরীক্ষাই করা যাচ্ছে না! এমনকী, কলকাতায় যে প্রতিষ্ঠানের উপরে রক্ত পরীক্ষার চাপ সর্বাধিক, সেই স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে কিটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ট্রপিক্যালে ভাইরোলজি-র বিভাগীয় প্রধান নিমাই ভট্টাচার্য জানান, এখন তাঁদের যে কিটে পরীক্ষা চলছে, সেটাই আপাতত শেষ সম্বল। এতে ৯৬ জনের রক্ত নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।
পরের দফায় কী হবে, ট্রপিক্যাল-কর্তৃপক্ষ তা ভেবে উদ্বিগ্ন। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অবশ্য কিট-সঙ্কটের আশঙ্কাকে আমল দিচ্ছেন না। “কিট নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা নেই।” এ দিন মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিগত শতাব্দীর আশি-নব্বইয়ের দশকে বর্ধমান জেলা জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ বিজয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সেই সময়ে তাঁরা রোগ নির্ণয়ের জন্য কিট ছাড়াও বিকল্প পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করতেন, ট্রপিক্যালের জোগানো কিছু সাজ-সরঞ্জামের সাহায্যে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর কি তেমন কোনও পদ্ধতি অনুসরণের কথা ভাবছে? স্বাস্থ্য অধিকর্তার জবাব, “কিট ছাড়া অন্য পদ্ধতি কী হতে পারে, আমাদের জানা নেই। এ নিয়ে আমরা কথা বলব।”