বয়স যা-ই হোক, শরীর-মন তরতাজা রাখতে শারীরচর্চা মাস্ট! জিম না হলেও নিদেনপক্ষে বাড়িতে বা পার্কে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ় তো করতে হবে। তবে সাবধান! শারীরচর্চার গুরত্ব যেমন মানুষ বুঝছেন, তেমনই এক্সারসাইজ় নিয়েও তৈরি হয়েছে বহু ভুল ধারণা। ঠিক ভাবে শারীরচর্চা শুরু করতে চাইলে এই ভুল, যাকে বলে ‘ওয়ার্কআউট মিথস’, সেগুলি ভাঙা দরকার।
মিথ— পেটের চর্বি কমাতে শুধু পেটের এক্সারসাইজ়
শরীরের কোনও একটা অংশ থেকে চর্বি কমানোর চেষ্টা অর্থাৎ স্পট ট্রেনিং করে কোনও লাভ হয় না। শারীরচর্চার সময়ে যত বড় এবং বেশি সংখ্যক পেশির ব্যবহার করা হবে, ততই দ্রুত শক্তি ক্ষয় হবে। মেদও ঝরবে তত বেশি। অর্থাৎ স্কোয়াট বা ডেডলিফটের মতো ব্যায়াম, যাতে জয়েন্টের ব্যবহার বেশি হয়, তাতে অনেক বেশি চর্বি বার্ন হয়। যেহেতু পেটের এক্সারসাইজ় করলে শুধু একটি জয়েন্টের কাজ হচ্ছে, ফলে লাভও কম। সাধারণত কারও শরীরের যে অংশে আগে মেদ জমে, সেখান থেকে সবচেয়ে শেষে মেদ ঝরবে। শরীরের ধরনের উপরে নির্ভর করে সেটা হতে পারে যেমন পেট, কোমর, গাল ইত্যাদি।
মিথ— ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে চেহারা ভারী হয়ে যায়, তাই মহিলাদের না করাই ভাল
শুধু ওজন নিয়ে এক্সারসাইজ় করার কারণে কারও চেহারা ভারী হয়ে যায় না। ওজন তুললে পেশির আকার বাড়ে বলে, এ রকম মনে হয়। আদতে চেহারা ভারী তখনই হবে, যখন ব্যায়াম করে যত ক্যালরি ক্ষয় করা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে। ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখলে, যথাযথ ব্যায়াম করলে চেহারা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মেয়েদের চেহারা ভারী হয়ে যায় এই ধারণাও ভুল। কারণ, যে টেস্টোস্টেরন হরমোন পেশির আকার বৃদ্ধি করে, তা মেয়েদের শরীরে তৈরি হয় না। ফলে নিশ্চিন্তে ওয়েট ট্রেনিং করতে পারেন।
মিথ— ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিতে হবে
শরীরে এনার্জির মূল সূত্র কার্বোহাইড্রেট। ফলে রোজকার ডায়েটের ৩০-৪০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট হওয়া উচিত। কার্বস কমাতে চাইলে ভাত, রুটির মতো স্টার্চযুক্ত খাবার কমানো যেতে পারে। তবে ফল, আনাজেও কিন্তু কার্বস আছে। এগুলো বাদ দেওয়া একেবারেই চলবে না। তা হলে এক্সারসাইজ় করার শক্তিই পাবেন না। শরীরে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেটের জোগান দিতে পালং শাক, ব্রকোলি, আপেল খান। এগুলি কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শরীরে এগুলো ধীরে ধীরে ভাঙে। শস্যর মধ্যে খেতে পারেন রাগি, বাজরা, জোয়ার।
মিথ— রোজ ওয়ার্কআউট করা জরুরি
রোজ ওয়ার্কআউট করার দরকার পড়ে না। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। এক্সারসাইজ়ের পরে শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রামের দরকার। তাই নিজের শারীরিক ক্ষমতা বুঝে সপ্তাহে তিন, চার বা পাঁচ দিন ওয়ার্কআউট করুন। কত দিন করবেন, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত, ট্রেনারের পরামর্শও নিতে পারেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গেও ওয়ার্কআউটের দিন ও সময় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। মনে রাখতে হবে, শারীরিক সুস্থতা এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে বিশ্রামের উপরেও। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে শরীর রিকভার করবে না, ফলে আপনার অতিরিক্ত পরিশ্রমের কোনও ফলও দেখতে পাবেন না। তবে রোজ হালকা ব্যায়ামের জন্য কিছুটা সময় রাখতে পারলে ভাল। সেটা পনেরো মিনিট মর্নিং ওয়াকও হতে পারে।
মিথ— মেদ ঝরাতে চাইলে দীর্ঘ সময় কার্ডিয়ো করতে হবে
মেদ ঝরাতে চাইলে শুধু মাত্র দীর্ঘ সময় ধরে কার্ডিয়ো করা যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে করতে হবে ওয়েট ট্রেনিং এবং অন্যান্য ওয়ার্কআউটও। তাতেই মেদ ঝরবে সচেয়ে দ্রুত। অনেকক্ষণ কার্ডিয়ো করলে শরীরে কর্টিজ়ল, যাকে আমরা স্ট্রেস হরমোন বলে জানি, সেটির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই হরমোন শরীরের মেদ ঝরতে দেয় না, জমিয়ে রাখে। ফলে হিতে বিপরীত হয়। তাই ট্রেনার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই ওয়েট লসের পরিকল্পনা করুন।
মিথ— ওয়ার্কআউট শুরুর আগে স্ট্রেচিং করতে হবে
সরাসরি ভারী ওয়ার্কআউট শুরু করা উচিত নয় এটা যেমন ঠিক, তেমনই এই সংক্রান্ত একটি ভুল ধারণাও রয়েছে যে, ওয়ার্কআউটের আগে ওয়ার্ম আপ করতে হবে। অনেকের ধারণা জয়েন্ট ও পেশিগুলিকে মুভমেন্টের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যায়ামের আগে স্ট্রেচিং করতে হবে। বরং স্ট্রেচিং করতে হবে ওয়ার্কআউটের শেষে।
এ বার থেকে এই ভুল ধারণাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সুস্থ থাকতে করুন যথাযথ শারীরচর্চা, তা না হলে কিন্তু উপকারের চেয়ে অপকার হবে বেশি।
তথ্য সহায়তা: স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ এবং কারেক্টিভ এক্সারসাইজ় স্পেশ্যালিস্ট রণদীপ মৈত্র