Exercises

পোক্ত হোক মূল পেশি

সাধারণত মনে করা হয়, ২০ বছর বয়স থেকেই হাই ইনটেনসিটি ‘কোর মাসল স্ট্রেংদেনিং’ ব্যায়াম করা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘লো ইনটেনসিটি’ ব্যায়ামও উপকারী।

Advertisement

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ০৯:০৬
Share:

কোর মাসল শক্তিশালী করলে শরীরও সুস্থ থাকে, সামগ্রিক পশ্চারও ঠিক থাকে। প্রতীকী ছবি।

সুস্থ থাকতে শারীরচর্চা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যকর আহারের বিকল্প নেই। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। সঙ্গে থাকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ওজন বৃদ্ধি, কোমরে ব্যথা, কুঁজো হওয়ার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এতে আত্মবিশ্বাসও হারাতে থাকেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে মুশকিল আসান করতে পারে ‘কোর মাসল স্ট্রেংদেনিং’ ব্যায়াম।

Advertisement

ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, পেট থেকে উরুর উপরের অংশ পর্যন্ত পেশিগুলিকে ‘কোর মাসল’ বা ‘মূল পেশি’ বলে। শরীরের এই অংশটির সঙ্গে মেরুদণ্ডের যোগ থাকে। তাই শরীরের ঊর্ধ্বাংশের সঙ্গে নিম্নাংশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই পেশিগুলি। এ ছাড়াও, পেলভিক ফ্লোর পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে কোর মাসল। তাই প্রসবের পরে বা বয়সকালে প্রস্রাব আটকে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক এই পেশিগুলি।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস জানাচ্ছেন, নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের সাহায্যে সহজেই শক্তিশালী করা যেতে পারে মূল পেশিগুলিকে। মেদ ঝরানো, শরীরের ভারসাম্য রক্ষা তো হয়ই। টানা কাজ করার পরে, ঘাড় বা কোমরের ব্যথাও থাকে নিয়ন্ত্রণে।

Advertisement

সাধারণত মনে করা হয়, ২০ বছর বয়স থেকেই হাই ইনটেনসিটি ‘কোর মাসল স্ট্রেংদেনিং’ ব্যায়াম করা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘লো ইনটেনসিটি’ ব্যায়ামও উপকারী। ব্যায়াম শুরুর আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে জানা দরকার, কার জন্য কী ধরনের ব্যায়াম উপযুক্ত।

যে ধরনের ব্যায়াম

সৌমেন জানাচ্ছেন, কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম নিয়মিত ভাবে করা যায়। যেমন,

  • প্ল্যাঙ্ক: লো ইনটেনসিটি প্ল্যাঙ্ক করতে, যোগা ম্যাটের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে দু’টি কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে শরীরটি তুলতে হবে। পায়ের ভর থাকবে বুড়ো আঙুলের উপরে। শরীর থাকবে টানটান। এই ব্যায়ামটি দিনে ২০ ‘কাউন্টিং’, ৮ থেকে ১০ ‘সেট’ করতে হবে। হাই ইনটেনসিটি প্ল্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের সময়ে প্রথমে একটি পা কিছুক্ষণ তুলে রাখা দরকার। তার পরে সেই পা নামিয়ে অন্য পা-ও তুলতে হয় একই ভাবে।
  • পেলভিক টিল্ট/ব্রিজ: লো ইনটেনসিটি ব্রিজের জন্য, প্রথমে ম্যাটে পিঠ রেখে সোজা শুতে হবে। হাত দু’টি বুকের পাশে সোজা করে রাখা থাকবে। পা ভাঁজ করে ধীরে ধীরে কোমরের অংশটি তুলতে হবে। দিনে এই ব্যায়ামটি ১৬ কাউন্ট, পাঁচ থেকে ছ’সেট করা যেতে পারে। হাই ইনটেনসিটি ব্রিজের জন্য কোমরের অংশটি তোলার পরে সেই অবস্থাতেই একটি পা তুলে ১০ কাউন্ট পর্যন্ত রাখতে হয়। ধীরে ধীরে ওই পা-টি নামিয়ে অন্য পা তুলতে হবে।
  • বুল ডগ এক্সারসাইজ়: লো ইনটেনসিটি বুল ডগ এক্সারসাইজ় করার জন্য একই তলে হাত-পা রেখে শরীরটি চতুষ্পদ প্রাণীর মতো অবস্থানে আনা দরকার। এ বার প্রথমে বাঁ পা ও ডান হাত এক সঙ্গে উপরে দিকে তুলে শরীর বরাবর আনতে হবে। ধীরে ধীরে হাত-পা নামিয়ে মাটির সঙ্গে ঠেকানোর পরে ডান পা ও বাঁ হাত দিয়ে একই ব্যায়াম করতে হবে। এটিও ১৬ কাউন্ট, ৩-৪ সেট করা প্রয়োজন। হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম করতে হলে, হাত-পা নামানোর সময় কনুই ও হাঁটু কাছাকাছি আনা দরকার।
  • সাইড লায়িং হিপ অ্যাবডাকশন: লো ইনটেনসিটি সাইড লায়িং হিপ অ্যাবডাকশন করতে প্রথমে এক পাশে শুয়ে হাত ভাঁজ করে, কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে মাথাটি সামান্য তুলতে হবে। এই অবস্থায় উপর দিকে যে পা-টি থাকবে, সেটি এক বার শূন্যে তুলে নামাতে হয়। দু’পাশ ফিরে দশ বার করে ব্যায়ামটি করা প্রয়োজন। হাই ইনটেনসিটি সাইড লায়িং হিপ অ্যাবডাকশনের জন্য যে দিকে পাশ ফিরে শোয়া হয়েছে, সে দিকের কনুই ও পায়ের হাঁটু থেকে নীচের অংশ এবং অন্য একটি হাতের উপরে ভর দিয়ে শরীরটি উপরে তোলা দরকার। এই অবস্থায় অন্য একটি পা শূন্যে তুলতে হবে। দু’ধরনের ব্যায়ামই প্রতি বারে ১০ কাউন্টিং, তিন থেকে চার সেট করলেই যথেষ্ট।

এ ছাড়াও সাইড প্ল্যাঙ্ক, ক্রাঞ্চেস, ভি-টিল্ট, কার্ডিও-সহ কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে।

নজর থাক খাবারে

গুরুপ্রসাদ জানাচ্ছেন, মূল পেশিকে ফিট রাখতে ব্যায়ামের ভূমিকা ২৫ শতাংশ ও খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ, মূল পেশিকে শক্তিশালী করতে নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্যতালিকার বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। অতিরিক্ত ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়া ঠিক নয়। পাশাপাশি, খাদ্যতালিকায় সব ধরনের পুষ্টিগুণ যাতে থাকে, সে দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কোন খাবার কতটা পরিমাণে খাবেন, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যায়।

মনে রাখা জরুরি

  • বয়স, উচ্চতা ও ওজনের উপরে নির্ভর করবে কোন ব্যায়াম কত বার করতে হবে। খাদ্যতালিকায় সব ধরনের খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকা দরকার। স্লিপ ডিস্ক বা মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement