আনলক শুরু হলেও অনেকেই এখনও ঘরবন্দি, বিশেষ করে পড়ুয়া ও বয়স্করা। অভ্যেস হয়ে গিয়েছে খানিকটা। সারাদিন বাড়ির স্টাডি কিংবা ডাইনিং টেবলে, অনেক সময়ে খাটের উপরেও ল্যাপটপ নিয়ে ঘাড় গুঁজে কাজ। শরীরের মুভমেন্ট তলানিতে এসে ঠেকেছে। ঘরের কাজকর্ম বেড়েছে বটে, কিন্তু অফিস যাতায়াতের পথে দৌড়ঝাঁপ, তাড়াহুড়োর সময়ে লিফ্টের অপেক্ষা না করে সিঁড়ি ভাঙার কসরত তো আর করতে হচ্ছে না। ফলে মাঝে-মাঝেই সমস্যায় ফেলছে ঘাড়ে-হাতে-পায়ে বা কোমরের পেশিতে টান। বাড়ি থেকে বেরোনোও কমে গিয়েছে বলে কিছুটা সময় বাঁচে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে একটু-আধটু শারীরচর্চা শুরু করলে মন্দ কী— এ ভাবনা বহু জনের মাথায়ই ঘুরছে এখন। নিঃসন্দেহে ভাল চিন্তা। কিন্তু কী ভাবে, কতটা, কবে শুরু করবেন, সেটা জানতে হবে।
শুরু করার সূচনা
যোগব্যায়াম সম্পর্কে প্রথমেই মনে রাখবেন, এটা সকলের জন্য। প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী শরীর সুস্থ এবং মন শান্ত রাখার রাস্তা দেখায় যোগব্যায়াম। একবার মনস্থির করে নিন যে, আপনি শুরু করবেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলেই আপনার কাজ অনেকটা এগিয়ে থাকল।
• প্রথমত মনে রাখুন, আপনি সবে শুরু করবেন। তাই ইউটিউবের ভিডিয়োয় যাঁরা ব্যায়াম শেখান, তাঁদের শারীরিক সক্ষমতা দেখে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না বা তাঁরা যে ভাবে যা-যা করছেন, ঠিক তেমন করেই সবটা করতে যাবেন না। প্রথমে দিনের কোনও একটা সময়ে ছাদে বা বাড়ির সামনে ৩০-৪০ মিনিট করে হাঁটুন। যতটা জোরে পারেন, ততটা। কয়েক দিন হাঁটা অভ্যেস হলে জগিং করুন। একেবারে উপযুক্ত জুতো পরে। শরীরের জড়তা ভাঙবে, রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, শরীর ব্যায়াম বা ওয়র্ক আউটের জন্য প্রস্তুত হবে।
• এই শুরুটা করার সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলতে হবে আর-একটি কাজ। নিজের সারাদিনের কাজকর্ম একটা রুটিনে বেঁধে ফেলুন। ঘুম থেকে ওঠা, শুতে যাওয়ার সময়টা নির্দিষ্ট করুন। ঠিক সময়ের ব্যবধানে স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়াদাওয়ার অভ্যেসও তৈরি করা দরকার। স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট বলতে খুব কঠোর কিছু নয়, সারাদিনে প্রচুর জল, মরসুমি ফল, আনাজপাতি, পরিমাণ এবং প্রয়োজনমতো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এই আর কী! যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে তেল, ঘি, মশলা, ভাজাভুজি। ব্যায়ামের সুফল পুরোমাত্রায় পেতে হলে এ সবও অপরিহার্য।
• এর পর ধীরে ধীরে ফ্রিহ্যান্ড শুরু করুন। স্ট্রেচিং বা বেন্ডিং জাতীয় ব্যায়াম করতে করতে শরীর নমনীয় হবে। আপনার ব্যথা বেদনা, খিঁচ বা পেশির টানগুলো আর টের পাবেন না, ব্যায়াম করার মধ্যে ভাল লাগা খুঁজে পাবেন। তখন বুঝবেন আপনার ফিটনেস রুটিন আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে সুস্থতর জীবনযাপনের দিকে।
• যদি সকালে উঠে ব্যায়াম করে নেওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব না হয়, তা হলে বিকেলের দিকে বা সুবিধেমতো যে কোনও সময় বেছে নিতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখুন, খাওয়াদাওয়া করার পর যেন অন্ততপক্ষে দু’-তিন ঘণ্টার ব্যবধানে ব্যায়াম শুরু হয়। খাওয়াদাওয়ার পর এই গ্যাপ না দিলে ব্যায়ামের সময়ে মাথা ঘোরা, বমিবমি ভাব বা পেশিতে খিঁচ ধরতে পারে। মনে রাখবেন, খাবার হজম করতে শক্তির প্রয়োজন। তাই সেখানে শক্তি ব্যয় হয় বলে খাওয়ার পরে আমরা কিছুটা অলস হয়ে পড়ি।
পুরো ফিটনেস রেজিম চলাকালীন মন যেন শরীরেই থাকে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের যত্নের সময়ে একনিষ্ঠ হতে হবে। তাই ব্যায়াম শুরুর আগে যে ভাবে সুবিধে হয় বসুন, তার পর চোখ বন্ধ করে গভীর ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া-ছাড়া করে মনঃসংযোগ করুন। হাঁটা, জগিং বা ব্যায়াম শেষ হয়ে গেলেও স্থির হয়ে মিনিট পাঁচেক বসুন। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ভাবুন আজকের সময়টুকুতে কী কী করলেন। অতি অবশ্যই শারীরচর্চার সময়ে মোবাইল দূরে রাখুন। ব্যায়াম করতে করতে আড়চোখে হোয়াট্সঅ্যাপ বা ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করা কদাপি নয়।
• কলকাতার এক জিমের কর্ণধার সৌমেন দাস বললেন, “যদি কোনও বয়স্ক মানুষ শুরু করেন, তা হলে প্রথমেই সকালে বা সন্ধেয় ৩৫-৪০ মিনিট পায়চারি। যাঁদের বয়স কম, তাঁরা জোরে হাঁটবেন। জগিং বা ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ে ফিট থাকার অনেকটাই কভার আপ হয়, ইমিউনিটিও বাড়ে। যোগাসনের মধ্যে শুরুতে করা যায় ভুজঙ্গাসন, শলভাসন। কমবয়সিরা করতে পারেন পুশ আপ আর বয়স্করা করতে পারেন ওয়াল পুশআপ। তার পর প্রাণায়াম বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ়। তবে ফুসফুস ভাল রাখার জন্য প্রাণায়াম এখন প্রয়োজনীয় ঠিকই, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নয়। এক একবার ১০ -১৫ বার শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করুন। অনভ্যস্ত মানুষ টানা আধঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট প্রাণায়াম করলে প্রেশার ফল করে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। হার্ট অ্যাটাক হওয়াও অসম্ভব নয়। তাই নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী শরীরে সইয়ে সইয়ে এগোতে হবে।”
অনেকটাই তো জানা হল, বাকিটা করতে করতে জানবেন। কাজেই আর দেরি কেন? শরীরকে কথা শোনান আরও সুস্থ এবং সক্ষম হয়ে ওঠার লক্ষ্যে। তবে অগস্ট মাস থেকে কিছু কিছু জায়গায় জিম খোলার অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যাওয়ার আগে না হয় বাড়িতেই শুরু হোক শারীরচর্চা।