—প্রতীকী চিত্র।
উত্তর দিনাজপুর জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত এক বছরে জেলায় বারোশো জন আত্মহত্যা করেছেন। ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন পুলিশ, প্রশাসন, মনোবিদ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
রবিবার রায়গঞ্জ শহরের বন্দরের শ্যামাপল্লি এলাকায় ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেখানে ওই সংস্থার সদস্যরা জেলার বিভিন্ন ব্লকের পড়ুয়াদের একাংশকে আত্মহত্যার প্রবণতার বিরুদ্ধে সচেতন করেন। সেখানে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে পড়ুয়াদের মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল বলে দেওয়া হয়।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জ মেডিক্যালে সপ্তাহে তিন দিন মানসিক ভাবে অসুস্থ রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। সেখানে এক জন মনোবিদও নিয়োগ করা হয়েছে। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় নামে সেই মনোবিদের দাবি, করোনা আবহের পর জেলায় ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের একাংশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। করোনা আবহে সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসিন্দাদের অবসাদে ভোগার সেটাও অন্যতম কারণ। সব্যসাচী বলেন, “প্রতি সপ্তাহে বহু মানুষকে কাউন্সেলিং করে মানসিক ভাবে সুস্থ করে তুলি। ফলে, এ বছর আত্মহত্যার প্রবণতা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে, গত একবছরে জেলায় ১২০০ জনের আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক।”
সব্যসাচীর মতে, টানা কোনও কারণে মন ভাল না থাকার জেরে বাসিন্দারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সেই থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়। তাঁর পরামর্শ, “মানসিক অবসাদ কিংবা মন ভাল না থাকলে, কেন অবসাদ ও মন ভাল নেই, তা নিজেকেই খুঁজে বার করতে হবে। কারণ, আত্মহত্যা জীবনের সমস্যার সমাধান নয়। সকলেরই পরিবার রয়েছে।” রায়গঞ্জের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক সমীর কুন্ডুর দাবি, পারিবারিক বিবাদের জেরেই জেলায় মহিলাদের আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। তিনি বলেন, “তাই, পরিবারে একে অপরকে বুঝতে হবে। বোঝাপড়া করে চলতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা রোখা সম্ভব হবে।”
ডিএসপি (রায়গঞ্জ) রিপন বল জানান, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বছরভরই নানা সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যার প্রবণতার বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়। মেডিক্যালের সুপার প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, “হতাশা, আবেগ, রাগ, ক্ষোভ ও মানসিক অস্থিরতা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়। মানসিক ভাবে কেউ বিব্রত মনে করলে, মাথা ঠান্ডা রাখুন। মেডিক্যালে গিয়ে মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে।”