প্রতীকী ছবি
স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া কোনও চিকিৎসক (রেসিডেন্ট ডাক্তার) যদি মানসিক ভাবে সুস্থ থাকেন, সেটা শুধু তাঁর নিজের স্বাস্থ্যের পক্ষেই ভাল নয়, তিনি যে রোগীদের চিকিৎসা করছেন, তাঁদের সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে চিঠি পাঠাল ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ (এনএমসি)। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো হয়, সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ, সপ্তাহে কোনও ছুটি না পাওয়া, ছুটির আবেদন গ্রাহ্য না হওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে অবসাদ ও হতাশায় ভুগছেন স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া চিকিৎসকেরা। এনএমসি-র কাছে বহু অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ জুন ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ড’ (পিজিএমইবি) বৈঠকে বসে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সপ্তাহিক ছুটি নিশ্চিত করতে হবে। অবসাদ ও হতাশাগ্রস্ত পড়ুয়াদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত যোগব্যায়াম চর্চার বন্দোবস্তও রাখতে হবে। স্নাতকোত্তরের প্রত্যেক পড়ুয়া চিকিৎসককে কাজের অনুকূল পরিবেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের ছুটির আবেদন মঞ্জুর করতে হবে।
এনএমসি-র অধীনস্থ পিজিএমইবি-র সভাপতি, চিকিৎসক বিজয় ওঝা তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, ড্রপ বক্স বা ইমেলের মাধ্যমে পাঠানো পড়ুয়াদের বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা যেতে পারে। সর্বোপরি, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডাক্তারি পড়ুয়াদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অবসাদ বা হতাশা থেকে কেউ চরম কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন। শেষ এক মাসে এ রাজ্যের তিন মেডিক্যাল পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানসিক অবসাদ বা হতাশার দিকটি উঠে এসেছে।
গত ১ জানুয়ারি থেকে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার বিষয়ে কর্মশালা শুরুর পদক্ষেপ করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি স্তরের পড়ুয়াদের জন্য ‘গেটকিপার ট্রেনিং’ চালু করা হয়েছে। যাতে হতাশা বা মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত আটকানো যায়।’’ তিনি আরও জানান, এ রাজ্যে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্যাল মিলিয়ে বিভিন্ন স্তরে ৫০ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া রয়েছেন। ‘গেটকিপার ট্রেনিং’-এর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য কী ভাবে ভাল রাখা যায়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা কেন্দ্রের মানসিক রোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও আপলোড করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গাতেই কর্মশালা আয়োজন করে সুফল মিলছে।
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘সমস্ত স্তরের পড়ুয়া ও চিকিৎসকেরা যাতে মন খুলে কথা বলতে পারেন, তার জন্যই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে মনের মধ্যে চাপা হতাশা তৈরি না হয়। কেউ বলতে না পারলেও অন্য জন কী ভাবে সেটা বুঝবেন, তা-ও কর্মশালায় শেখানো হচ্ছে। যাতে সহজেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছয়।’’