মাত্র ১৬ বছর বয়সে অপহরণ করে কেরল আর তামিলনাড়ুর নানা জায়গায় ঘুরিয়ে ৪০ দিন ধরে অন্তত বার ষাটেক ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে। সেই অপরাধের বিচার হল দীর্ঘ ১৮ বছর পরে।
কেরল হাইকোর্ট আজ সূর্যনেল্লি গণধর্ষণ মামলার মুখ্য অভিযুক্ত ধর্মরাজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। বিচারপতি কে টি শঙ্করন এবং বিচারপতি এম এল জোসেফ ফ্রান্সিসের বিশেষ বেঞ্চ বলেছে, বাকি ২৩ অপরাধীকে ৫ থেকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হবে।
এই মামলায় মোট ৩৬ জন অভিযুক্ত ছিল। যাদের মধ্যে আইনজীবী থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ব্যবসায়ীও রয়েছে। এমনকী নাম জড়িয়েছিল কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েনেরও। তার মধ্যে বিচার চলাকালীন ৫ অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। সাত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। মেয়েটিকে অপহরণ করে অন্যদের হাতে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ার অপরাধে প্রথম অভিযুক্ত ইদুক্কির বাস কন্ডাক্টর রাজু এবং দ্বিতীয় অভিযুক্ত ঊষাকে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। বিচারপতিরা রায় দিতে গিয়ে বলেছেন, “ধর্ষণের ফলে আক্রান্তের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। যা খুনেরই সমান। এটা নিয়ে আর সন্দেহ নেই যে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে।”
সে দিনের সেই কিশোরী আজ বছর ৩৪-এর তরুণী। ১৯৯৬ সালের ৪০ দিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনও তাড়া করে। কাজের জন্য ছাড়া আর বিশেষ বাড়ির বাইরে বেরোন না এখন। ভয় করে। ধর্ষণকারীদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে বাড়ি ফিরে এলেও ঠিকানা বদল করতে হয়েছে। প্রতিবেশীরা টিকতে দেননি। ১৮ বছর পরে হাইকোর্টের রায়ে খুশি তিনি। বলেছেন, “হাল্কা লাগছে। এত দিনে লোকে সত্যিটা জানবে।” তাঁর বাবা-মা বলেন, “লড়াইটা অনেক বছরের। এটা শুধু আমাদেরই লড়তে হয়েছে।”
কিন্তু এত দেরি হল কেন?
সূর্যনেল্লি মামলার রায় দিতে গিয়ে ২০০৫ সালে কেরল হাইকোর্ট ৩৫ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে মুখ্য অভিযুক্ত ধর্মরাজনের যাবজ্জীবনের সাজা কমিয়ে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন ওই তরুণী। সুপ্রিম কোর্টেও আট বছর পড়ে ছিল সেই আবেদন। দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে বিতর্কের জেরে নড়েচড়ে বসে সুপ্রিম কোর্ট। গত বছরই সূর্যনেল্লি মামলার পুনর্বিচারের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। কেরল হাইকোর্টে নতুন বিচারপতিদের নিয়ে তৈরি হয় বিশেষ বেঞ্চ।
ইদুক্কি জেলার সূর্যনেল্লিতে স্কুল হস্টেলে থাকতেন তরুণী। প্রেমের ফাঁদ পেতে স্কুল যাওয়ার পথে ১৯৯৬ সালের ১৬ জানুয়ারি তাঁকে অপহরণ করে রাজু। নিয়ে যায় ঊষা এবং ধর্মরাজনের কাছে। ধর্মরাজন পেশায় আইনজীবী। এরাই তাঁকে কেরল আর তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে নিয়ে যায়। ৪০ দিন নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাঁকে।
হাইকোর্টে অপরাধীদের আইনজীবী মেয়েটির চরিত্রের দিকে আঙুল তোলেন। তাঁর যুক্তি, ‘মেয়েটি বন্দিদশা থেকে পালানোর চেষ্টা করেনি। তা থেকেই বোঝা যায় সে বেপথে চলে গিয়েছিল।’ তাঁকে শিশু যৌনকর্মী বলতেও ছাড়েননি ওই আইনজীবী। বিচারপতিরা তাতে কান দেননি। তাঁরা সাফ বলেন, “মেয়েটি বন্দি অবস্থায় প্রচণ্ড আতঙ্কে ছিল। ধর্মরাজন তাকে ভয় দেখাত। তাই এত সহজে বলা যায় না, যে সে বেপথে চলে গিয়েছিল।”