পর পর ধর্ষণ অখিলেশের রাজ্যে, রিপোর্ট তলব কেন্দ্রের

তিন দিনে তিন জায়গায় চারটি ধর্ষণ। একটিতে গণধর্ষণ করে গাছ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই কিশোরীকে। উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ, আজমগড় এবং এটাওয়ার এই তিনটি ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে অখিলেশ প্রশাসন। বদায়ূঁতে দুই দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে হত্যা করে মৃতদেহ গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গোটা ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি জানতে রিপোর্ট তলব করেছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০৩:০১
Share:

তিন দিনে তিন জায়গায় চারটি ধর্ষণ। একটিতে গণধর্ষণ করে গাছ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই কিশোরীকে।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ, আজমগড় এবং এটাওয়ার এই তিনটি ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে অখিলেশ প্রশাসন। বদায়ূঁতে দুই দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে হত্যা করে মৃতদেহ গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গোটা ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি জানতে রিপোর্ট তলব করেছেন। ঘরে বাইরে এই প্রবল চাপের মধ্যে আজ সাংবাদিক বৈঠকে মেজাজ হারান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।

তাঁর রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন এক মহিলা সাংবাদিক। অখিলেশ তাঁকে ঝাঁঝিয়ে বলে ওঠেন, “আপনার কোনও সমস্যা হয়েছে? আপনি তো সুরক্ষিত। কেন মাথা ঘামাচ্ছেন তা হলে?” তার পরে সবার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলে যান, “আমাদের রাজ্যের মতো পুলিশ কন্ট্রোল রুম আর কোথাও নেই। যদি কিছু ঘটে থাকে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

Advertisement

বদায়ূঁর ঘটনায় কিন্তু ধর্ষিতা দলিত মেয়ে দু’টির পরিবারের অভিযোগ, তারা বলা সত্ত্বেও সঙ্গে সঙ্গে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। পরে দু’জন কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়। আর আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রিপোর্ট তলব করায় তড়িঘড়ি তাদের বরখাস্ত করা হয়। রিপোর্টও পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। বদায়ূঁতে গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে অখিলেশ অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

গত বুধবার সকালে বদায়ূঁর কাটরা গ্রামে ১৪ এবং ১৫ বছরের দুই কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় একটি আমগাছ থেকে। এক কিশোরীর বাবা বলছেন, পুলিশ আগে ব্যবস্থা নিলে হয়তো মেয়ে দু’টির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হত। বাবার অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত থেকেই মেয়েরা নিখোঁজ ছিল। এক ভাই ওদের খুঁজতে বেরোয়। বাড়ি ফিরে এসে জানায় গ্রামেরই সাত জন মেয়েদের অপহরণ করেছে।

এর পরে বাবার বয়ান অনুযায়ী, অপহরণকারী এক ব্যক্তির বাড়ি যান তাঁরা। সেই ব্যক্তি অপহরণের কথা স্বীকার করলেও মেয়েদের ছাড়তে চায়নি। সেই সময়ে সেখানে হাজির ছিলেন এক কনস্টেবল। বাবার দাবি, তিনি কোনও সাহায্য করেননি। একেই পরে সাসপেন্ড করা হয়। মেয়ে দু’টির পরিবার পরে এফআইআর করতে গেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এই সময়েই জানা যায়, মেয়ে দু’টির মৃতদেহ গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। মূলত তাদের জন্যই সক্রিয় হয় পুলিশ। ধর্ষণ এবং খুনের মামলা দায়ের করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাত অভিযুক্তের মধ্যে মাত্র তিন জন এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে এক জন পুলিশকর্মী সর্বেশ যাদব। আর অন্য দু’জন ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই ভাই পাপ্পু এবং অবধেশ যাদব। বাকি দু’জনের মধ্যে আছে পাপ্পুদের আর এক ভাই উর্বেশ যাদব এবং পুলিশকর্মী ছত্রপল যাদব। বাকি দু’জনের পরিচয় জানা যায়নি।

বদায়ূঁর ঘটনার পর পরই মুলায়ম সিংহের কেন্দ্র আজমগড় থেকেও আসে ধর্ষণের খবর। আজমগড়ের সরাইমির এলাকায় ১৭ বছরের একটি দলিত মেয়েকে চার জন মিলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মুকেশ, অরবিন্দ, বিক্রম এবং দুর্গেশ নামে ওই চার জন পলাতক। এখানেই শেষ নয়। অখিলেশের নিজের জেলা এটাওয়ায় এক নির্যাতিতার মাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাবা নৃশংস ভাবে পিটিয়েছে। মহিলা কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছেন। মেয়েটির পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কারণ পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার পর থেকেই তাদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবার। অভিযুক্তর বাবাকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

এই তিন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যে কি আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই? বসপা নেত্রী মায়াবতী আজ অখিলেশের সমালোচনা করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছেন। বদায়ূঁ ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধীও বলেছেন, প্রয়োজনে ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া যেতেই পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement