গঙ্গায় ভেসে এল শতাধিক পচাগলা দেহ

১,২,৩... ৮, ৯, ১০। দিন ঢলছে, সংখ্যা বাড়ছে। ৪১, ৪২...৭৮,৭৯... ১০৩, ১০৪...। ক্রিকেটের রান নয়। মানুষের লাশ। উত্তরপ্রদেশের উন্নাও-তীরে এখন শতাধিক লাশের স্তূপ। রহস্যের অন্য নাম উন্নাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

চলছে গঙ্গা থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ। বুধবার উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে। ছবি: পিটিআই।

১,২,৩... ৮, ৯, ১০। দিন ঢলছে, সংখ্যা বাড়ছে। ৪১, ৪২...৭৮,৭৯... ১০৩, ১০৪...। ক্রিকেটের রান নয়। মানুষের লাশ। উত্তরপ্রদেশের উন্নাও-তীরে এখন শতাধিক লাশের স্তূপ।

Advertisement

রহস্যের অন্য নাম উন্নাও।

গত শীতে ছিল গুপ্তধন। সাধুর স্বপ্নে পাওয়া গুপ্তধনের জিগিরে হঠাৎই খবরের শিরোনামে চলে আসে কানপুর সংলগ্ন অখ্যাত জনপদটি। এই শীতে সেখানেই নতুন রহস্যের হাতছানি।

Advertisement

কী ভাবে এল, কোথা থেকে এল এতগুলো লাশ? কাদেরই বা মৃতদেহ? রাজ্য থেকে কেন্দ্র, উত্তর খুঁজছে সবাই। বসে গিয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি। কিন্তু প্রায় গলে যাওয়া ওই শবগুলোর ময়না-তদন্তও সম্ভব নয়, জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মৃত্যুর কারণ বুঝতে ভরসা এখন ডিএনএ পরীক্ষা।

উন্নাওয়ের গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। ভেঙে পড়া সিপাহী বিদ্রোহের আমলের কেল্লা, গুপ্তধনের রোমাঞ্চেই এতদিন মজে ছিল প্রাচীন ওই জনপদটি। উন্নাও থেকে কিছুটা আগে গঙ্গায় নদীর উপর ব্রিজ তৈরিতে হাত দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। শীতের গঙ্গায় জল কমলেই মাঝে মধ্যেই মৃতদেহ এসে আটকে যেত সদ্য গজিয়ে ওঠা চড়ায়। এত দিন সে সব নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায়নি।

কিন্তু এ বার যে লাশের ভিড়। একটা-আধটা নয়, একশোরও বেশি লাশ এসে জমা হয়েছে উন্নাও ও সংলগ্ন পারিয়ার ঘাটে। গন্ধে পালাচ্ছে সবাই। মৃতদেহের সংখ্যা দেখে টনক নড়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও। তাঁর নির্দেশে রাজ্য সরকারের কাছে আলাদা করে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক। প্রাথমিক রিপোর্টও জমা পড়েছে উমা ভারতীর জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে। কিন্তু কোনও উত্তর মিলছে না।

উঠে এসেছে একাধিক সম্ভাবনা। জেলাশাসক সৌম্য অগ্রবাল যেমন বলেন, “উন্নাওয়ের উজানে পারিয়ারের কাছে গঙ্গার একটি শীর্ণ ধারা রয়েছে। সেখানে শ্মশান রয়েছে। সেখানে মৃতদেহ মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শীতের গঙ্গায় জল কম থাকায় সম্ভবত মাটি সরে গিয়ে মৃতদেহগুলো বেরিয়ে পড়েছিল। এখন মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গায় জল ছাড়ায় সেগুলো ভেসে উন্নাওয়ে জমা হয়েছে।”

জেলাশাসকের ওই প্রাথমিক রিপোর্টে খুব একটা সন্তুষ্ট হননি উমা ভারতী। তিনি তদন্ত করার জন্য জলসম্পদ মন্ত্রকের একটি দলকে পাঠিয়েছেন। উঠে আসছে চক্রান্ত-তত্ত্বও। সম্প্রতি উন্নাওতে দেশি মদ খেয়ে মারা যান বেশ কয়েক জন। অনেকের বক্তব্য, ওই ঘটনা চাপা দিতে অধিকাংশ মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। সেগুলোই ভেসে এসেছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, উত্তরাখণ্ডে বন্যায় যারা ভেসে গিয়েছিলেন, তাঁদের সকলের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। এগুলো তাঁদেরই দেহ। যদিও এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে জলসম্পদ মন্ত্রক। উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের মধ্যে একাধিক বাঁধ রয়েছে। সেই বাঁধেই আটকে যাওয়ার কথা বন্যায় ভেসে যাওয়া দেহগুলো। কেউ আবার বলছেন গণহত্যা। কিন্তু কোথায় হল? কবে হল? গণহত্যা নিয়ে অন্তত স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।

সব মিলিয়ে গুজবে বুঁদ উন্নাও। কাল ৩০টি দেহ জল থেকে তোলা হয়েছিল। আজ সন্ধে পর্যন্ত তোলা হয় আরও ৭৪টি। পচা-গলা দেহগুলো গঙ্গার তীর থেকে অন্য কোথাও সরাতে রাজি নন পুরসভার কর্মীরা। সেখানেই তাই আপাতত বালি-মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে শবগুলো। দশ জনের একটি চিকিৎসক দল ৮০টি দেহ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। আপাতত মৃত্যুর কারণ বুঝতে ভরসা এই ডিএনএ পরীক্ষাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement