Manohar Lal Khattar

ক্ষোভ সামালে খট্টরকে সরানোর অঙ্ক বিজেপিতে

হরিয়ানা জাঠ অধ্যুষিত রাজ্য হলেও খট্টর নিজে জাঠ নন। ফলে দু’বারের শাসনে জাঠদের স্বার্থরক্ষা না হওয়ার কারণে জাঠেদের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ খট্টরের বিরুদ্ধে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৪৮
Share:

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। ছবি: পিটিআই

সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হাওয়া সামলাতে কর্নাটকে বিএস ইয়েদুরাপ্পা, গুজরাতে বিজয় রূপাণী, ত্রিপুরায় বিপ্লব দেব, উত্তরাখণ্ডে তীর্থ সিংহ রাওয়তকে সরিয়েছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বার কি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের পালা? সেই প্রশ্নই ঘুরছে দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে।

Advertisement

আগামী ২০২৪ সালে লোকসভার পরেই হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন। ওই রাজ্যে পরপর দু’টি বিধানসভা ভোটে জিতেছে দল। স্বভাবতই ওই রাজ্যে তৃতীয় বার জিতে হ্যাটট্রিক করার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। কিন্তু সেই কাজে তাঁদের প্রধান কাঁটা এখন মনোহর লাল নিজেই। দলের একাংশের মতে, ন’বছরের কাটানো মনোহর লালের বিরুদ্ধে বড় মাপের ক্ষোভ যে জমেছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি ওই রাজ্যে বিজেপি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, মনোহর লালের নেতৃত্বে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ে নামলে কংগ্রেসের হাতে দলের হারের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ওই রাজ্যে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা দলের নেতা ভূপেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে অনেকটাই গুছিয়ে উঠতে পেরেছে কংগ্রেস।

হরিয়ানা জাঠ অধ্যুষিত রাজ্য হলেও খট্টর নিজে জাঠ নন। ফলে দু’বারের শাসনে জাঠদের স্বার্থরক্ষা না হওয়ার কারণে জাঠেদের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ খট্টরের বিরুদ্ধে। তাই জাঠেদের মানভঞ্জনে আগামী দেড় বছরের জন্য কোনও জাঠ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথা ভাবা হচ্ছে ওই রাজ্যে। কেবল জাঠেরা নয়, ওই রাজ্যের আহির এবং ব্রাহ্মণ সমাজও খট্টরের উপরে ক্ষুব্ধ।

Advertisement

শীর্ষ নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, দলের অন্দরে বিভিন্ন সমাজের মধ্যে যে বিভেদ দেখা দিয়েছে, তা মেটাতে আদৌ সক্রিয় হননি খট্টর। ফলে যত দিন গড়িয়েছে, বিভাজনরেখা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বিজেপির মধ্যে। যা দুর্বল করেছে বিজেপিকেই। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘খট্টরের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়া রয়েছে, তা স্পষ্ট। উত্তরাখণ্ড, গুজরাতে ভোটের ঠিক দু’বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীকে সরানোর সুফল পেয়েছিল দল। অন্য রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করার কৌশল সফল হওয়ায় এ রাজ্যেও সেই সমীকরণ প্রয়োগের কথা ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’

তেমনই ঝাড়খণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া থাকলেও সরানো হয়নি মুখ্যমন্ত্রীদের। ওই দুই রাজ্যেই পরাজিত হয় বিজেপি। যা মাথায় রেখে ক্রমশ খট্টরকে সরানোর দাবিতে রাজ্য নেতৃত্ব চাপ বাড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে। তা ছাড়া নরেন্দ্র মোদীর বিতর্কিত তিন কৃষি আইন ঘিরে বিক্ষোভের সময়ে খট্টর যে ভাবে কৃষক সমাজের বিরুদ্ধে যে আক্রমণাত্মক হয়েছিলেন, তা ভাল ভাবে নেননি কৃষক নেতারা। পঞ্জাবের মতো হরিয়ানার কৃষক নেতারাও এ যাত্রায় বিজেপিকে ‘শিক্ষা’ দিতে চান। ফলে কৃষকদের ক্ষোভের বিষয়টিও মাথায় রেখে খট্টরকে সরানোর দাবি উঠেছে দলের মধ্যেই। পরিবর্তে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারেন, এমন কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি তুলেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। খট্টরকে যে সরানোর কথা ভাবা হচ্ছে, সে জল্পনাকে উস্কে দিয়েছেন ওই রাজ্যের রোহতকের বিজেপি সাংসদ অরবিন্দ শর্মা। রাজ্যের ব্রাহ্মণ জনসংখ্যার কথা ভেবে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী ব্রাহ্মণ সমাজের কোনও নেতাকে করার প্রশ্নে সওয়াল করেছেন তিনি। অরবিন্দর কথায়, ‘‘আমি বলছি না, খট্টরকে সরানো হবে! সেই সিদ্ধান্ত নেবে দল। কিন্তু সরানো হলে যেন ওই রাজ্যের কোনও ব্রাহ্মণ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement