লালুপ্রসাদের সভায় বাচ্চাপ্রসাদ (চিহ্নিত)।— ফাইল চিত্র।
একটি লাল ডায়েরি। আর তাকে ঘিরেই তদন্ত গুটিয়ে আনতে চাইছে বিহার পুলিশ। বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে ওই লাল ডায়েরিকেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ মনে করছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) ডায়েরির মালিক হলেন কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত বিষুণ রায় কলেজের অধ্যক্ষ বাচ্চাপ্রসাদ ওরফে অমিত কুমার।
সেই ডায়েরি তিনি কোথায় রেখেছেন তা জানতে দু’দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বাচ্চাবাবুকে। তবে লাল ডায়েরি নিয়ে এখনও ‘স্পিকটি নট’ তিনি। গত কাল রাত থেকেই তাঁকে নিয়ে বেশ কয়েকটি ডেরায় অভিযান চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। গোটা অভিযানে নজরদারি করেছেন খোদ পটনার এসএসপি মনু মহারাজ। তবে ডায়েরি রহস্যের সমাধান এখনও হয়নি।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য জুড়েই বড় মাপের সিন্ডিকেট চালাতেন বাচ্চাবাবু। এই শিক্ষা-সিন্ডিকেটের কর্তাদের নাম ও ফোন নম্বর ওই ডায়েরিতেই রয়েছে। এ ছাড়া কাকে কখন কত টাকা পৌঁছনো হয়েছে তারও জমাখরচের হিসেব রয়েছে তাতে। কোনও কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সেই তথ্য রাখতেন না বাচ্চাবাবু। সে কারণেই লাল ডায়েরি উদ্ধার করা তদন্তকারীদের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া নথিতে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাচ্চাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রায় একশো কোটি টাকার জমি রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নগদ টাকায় সে সব জমি কেনা হয়েছে। বিষুণ রায় কলেজের ধৃত এক শীর্ষ কর্তা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, প্রায় দু’ডজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বাচ্চাবাবুর যোগাযোগ ছিল। শুধু বিহারের রাজনৈতিক শিবির নয়, দিল্লিতেও বাচ্চাবাবুর গতিবিধি ছিল অবাধ। বাচ্চাপ্রসাদের বাড়ি ও কলেজে অভিযান চালানোর সময়ে বেশ কিছু নথিপত্র পুলিশের হাতে এসেছে। তার মধ্যেও একটি ডায়েরি রয়েছে। তাতে সংক্ষেপে কয়েকটি নাম ও মোবাইল নম্বর রয়েছে। কিন্তু সেটি ছাড়াও ওই লাল ডায়েরি নিয়ে বাচ্চাপ্রসাদ সব সময়ে ঘুরতেন বলে জানা গিয়েছে। এর আগে আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে বাচ্চাবাবুর অন্তরঙ্গ আলাপের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। লালুপ্রসাদের ছেলে তথা বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং গিরিরাজ সিংহ টুইটারে একে অপরকে এ নিয়ে আক্রমণও করেছেন।
বাচ্চাপ্রসাদ ছাড়াও বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতির প্রাক্তন অধ্যক্ষ লালকেশ্বর প্রসাদ সিংহ ও তাঁর স্ত্রী তথা প্রাক্তন জেডিইউ বিধায়ক ঊষা সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার করেছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে আজ লালকেশ্বরের বাড়িতে নোটিস টাঙানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। নোটিস টাঙানোর পরেও ওই দম্পতি আত্মসমর্পণ না করলে তাঁদের সম্পতি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের পাসপোর্ট রদ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। লালকেশ্বর ও ঊষাকে গ্রেফতার করতে দিল্লি-সহ বেশ কয়েক জায়গায় দলও পাঠানো হয়েছে। আবার বিষুণ রায় কলেজের হিন্দি বিভাগের শিক্ষিকা বীণা সিংহকে এ দিন বেশ কয়েক ঘণ্টা জেরা করেছেন গোয়েন্দারা।
পরীক্ষা কেলেঙ্কারি নিয়ে এ দিন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন বৈশালীর জেলাশাসক রচনা জালান। বিষুণ রায় কলেজের পড়ুয়ারা প্রতি বারই হাজিপুরের জিএস স্কুলে পরীক্ষা দেন। রচনার দাবি, এ বার পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তনের কথাই ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী এক আমলার মৌখিক নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি।
এরই মধ্যে বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতির ২৫১ জনকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনন্দ কিশোর। এ ছাড়া ৩০টি বায়োমেট্রিক মেশিন এবং প্রতিটি ঘরে সিসিটিভি লাগানোর নির্দেশও জারি করা হয়েছে।