‘ভুয়ো খবর’ নিয়ে বৈঠকে গুগল, টুইটার ও ফেসবুক কর্তাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল সরকারি আধিকারিকদের। সরকারি সূত্রে খবর, এর ফলে আমেরিকান তথ্যপ্রযুক্তি সং স্থাগুলির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে।
ভারতে নয়া তথ্যপ্রযুক্তি বিধি কার্যকর হওয়ার পরে টুইটার-ফেসবুকের সঙ্গে বেশ কয়েক বার টানাপড়েন হয়েছে মোদী সরকারের। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ইউটিউবের ৫৫টি চ্যানেল ও টুইটার-ফেসবুকের কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। তাদের তরফে জানানো হয়, ওই চ্যানেল ও অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে ‘ভুয়ো খবর’ ও ‘ভারত-বিরোধী’ তথ্য প্রচার করা হচ্ছিল। এগুলির মধ্যে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট চালানো হত পাকিস্তান থেকে। নয়া তথ্যপ্রযুক্তি বিধিতে বর্ণিত ‘জরুরি ক্ষমতা’ ব্যবহার করে এই পদক্ষেপ করে কেন্দ্র।
ওই পদক্ষেপের পরে এই প্রথম টুইটার, ফেসবুক, গুগল ও ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা শেয়ার চ্যাট, কু-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অফিসারেরা। সূত্রের খবর, সরকারের তরফে জানানো হয় ভুয়ো খবর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি উপযুক্ত পদক্ষেপ না করার ফলেই সরকারকে কোনও কোনও পোস্ট সরানোর অনুরোধ করতে হচ্ছে। তার ফলে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ছে ভারত সরকার। বিভিন্ন শিবির থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভারত সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। ভুয়ো খবর খুঁজে বার করার ক্ষেত্রে গুগলের অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনা করতে বলেন তাঁরা।
সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়, তারা ভুয়ো খবর রুখতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করে। কোনও বিষয়বস্তু সরানোর সরকারি অনুরোধ আইনসম্মত হলে তা নিয়েও পদক্ষেপ করা হয়।
সরকারি অনুরোধের ফলে বিষয়বস্তু সরানো নিয়ে দিল্লির অস্বস্তি এড়াতে একটি প্রস্তাব দেন গুগল কর্তারা। তাঁরা জানান, প্রকাশ্যে বিষয়বস্তু সরানোর অনুরোধ না করে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে সরকার। সে ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমবে। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁরা জানান, একমাত্র বিষয়বস্তু সরানোর অনুরোধ প্রকাশ করলেই প্রমাণ করা যায় যে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করছে না।
এ নিয়ে সরকারি ভাবে মুখ খোলেনি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। তবে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের খবর ঠিক নয়। তবে সরকারের বক্তব্য ‘জোরালো ভাবে’ তুলে ধরা হয়েছে। এক মন্ত্রক কর্তার বক্তব্য, ‘‘অন্য দেশে এই সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির বিতর্কিত বিষয়বস্তু নিয়ে পদক্ষেপ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ভারতে এরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে চায় না। সরকারের তরফে অনুরোধের জন্য অপেক্ষা করে। ভারত সরকারকে এই সংস্থাগুলির উপরে চাপ দিতে হয়। ফলে ভারত বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে বলে ধারণা তৈরি হয়।’’
ফেসবুক, টুইটার, শেয়ার চ্যাট এই বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেনি। গুগলের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘সরকারি অনুরোধ এলে তা খতিয়ে দেখা হয়। প্রয়োজনে স্থানীয় আইন মেনে বিষয়বস্তু সরিয়ে দেওয়া হয়।’’ কু জানিয়েছে, তারা আইন মেনে চলে। বিষয়বস্তুর উপরে কড়া নজরদারি করা হয়।