জয়েন্ট এন্ট্রাসে ভাল ফল করেও আর্থিক টানাটানিতে ডাক্তারি পড়া হয়নি সাহিনা সুলতানার। সচ্ছল পরিবারে বিয়ে হয়ে যায় মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির অষ্টাদশী মেয়েটির। পণের দাবিতে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে স্বামীও গায়ে হাত তুলত। বছর দেড়েক পর সাহিনা জানতে পারেন স্বামীর অন্য সম্পর্ক আছে। প্রতিবাদ করায় স্বামী তালাক দেয়। শ্বশুরবাড়ির কাছ থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণে জলঙ্গি কলেজে এখন ইংরেজিতে অনার্স পড়ছেন সাহিনা।
বাঁকুড়ার মেহেরুন্নিসা ভাবতেই পারেন না কী ভাবে একরত্তি বাচ্চা দু’টোকে বড় করবেন! কাঁদতে কাঁদতে বছর পঁচিশের যুবতী বলেন, ‘‘স্বামী মুখে মুখে তালাক দেয়! এক কাপড়ে দুধের শিশুদের নিয়ে বেরিয়ে আসি।’’
ভারতসভা হলে শনিবার এ ভাবেই একের পর এক তালাকপ্রাপ্ত মহিলা শোনাচ্ছিলেন নিজেদের লড়াইয়ের কথা। মৌখিক ভাবে তিন তালাক বন্ধের দাবি তুলে ওই মহিলারা চান, ‘‘তালাক দিতে হলে আইন মেনে আদালতের হস্তক্ষেপেই তা হোক। বহুবিবাহও বন্ধ হোক।’’ তালাক বন্ধের লড়াইয়ে তাই সকলকেই সামিল হওয়ার অনুরোধ করছেন বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। সাহিনারা যখন নিজেদের যন্ত্রণার কথা বলছেন, তখন রোটারি সদনে আর এক অনুষ্ঠানে আকবর অভিযোগ করলেন, কিছু মুসলিম ইসলামের দোহাই দিয়ে তিন তালাকের পক্ষে সওয়াল করছেন। বললেন, ‘‘তিন তালাকের নামে নারীদের উপর জুলুম হচ্ছে, এটা বলাই নাকি ইসলাম বিরোধী! মুসলিমরা আসলে নিজেদের দোষ ঢাকতে ইসলামকে দায়ী করছে!’’ কেন তালাকে মহিলাদের সম্মতি নেওয়া হবে না, সে প্রশ্ন তুলে আকবর বলেন, ‘‘ইসলামে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। বিয়েতে নারীর সম্মতি লাগলে তালাকেও কেন মত নেওয়া হবে না।’’
সম্প্রতি দেশজুড়ে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড যে ভাবে তিন তালাকের পক্ষে সভা করেছে, তারও সমালোচনা করেছেন আকবর। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বোর্ডের নামটা বদলে মুসলিম মেল পার্সোনাল ল বোর্ড হয়েছে মনে হচ্ছে!’’ আকবরের পাশে বসা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ল বোর্ডের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা কী ভাবে তিন তালাক সমর্থন করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বললেন, তা তো মধ্যযুগীয় বর্বরতা! ভোটের জন্য মানুষের স্বাধিকার ও শালীনতাকে কি এ ভাবে বলি দিতে হয়?’’