তিন তালাক অবাঞ্ছিত: সুপ্রিম কোর্ট

মুসলিমদের মধ্যে তিন তালাক বিবাহ বিচ্ছেদের সব থেকে খারাপ ও অবাঞ্ছিত প্রথা বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত এখনও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০৪:১০
Share:

মুসলিমদের মধ্যে তিন তালাক বিবাহ বিচ্ছেদের সব থেকে খারাপ ও অবাঞ্ছিত প্রথা বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

শীর্ষ আদালত এখনও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। প্রাথমিক ভাবে ছ’দিন ধরে শুনানি চলবে বলে ঠিক হয়েছে। এখনও তিন তালাকের সমর্থনকারী মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের আইনজীবীরা সওয়ালই করেননি। আবার মোদী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলও এখনও তিন তালাকের বিরোধিতায় মাঠে নামেননি।

তার আগেই, শুনানির দ্বিতীয় দিনে তিন তালাক নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই নরেন্দ্র মোদী সরকার, বিজেপি তথা সঙ্ঘ-পরিবার উজ্জীবিত। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের কর্তারা অবশ্য একে নেহাতই এক জন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

শুনানির সময় আজ বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যান মন্তব্য করেন, ‘‘মুসলিমদের যে কোনও চিন্তাধারাই বলবে, তিন তালাকের আইনি অনুমতি থাকলেও, এটি বিয়ে ভাঙার সব থেকে খারাপ প্রথা, যা একেবারেই কাম্য নয়।’’

তিন তালাক নিয়ে শুনানিতে আদালত-বন্ধু হিসেবে বিচারপতিদের সাহায্য করছেন সলমন খুরশিদ। আজ তিনি মুসলিমদের নিকাহ হালালা ও নিকাহনামা-র বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। খুরশিদ বলেন, নিকাহ হালালা অনুযায়ী, তালাকের পর প্রাক্তন স্ত্রী-কেই পুনর্বিবাহ করতে হলে, ওই মহিলাকে আগে অন্য কোনও পুরুষকে বিয়ে করে, সহবাস করতে হবে। তার পর তাঁর নতুন স্বামী তালাক দিলেই পুনর্বিবাহ সম্ভব। তিন তালাকের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই নিকাহ হালালা-র সমস্যা এসে হাজির হয়। যা জটিলতার সৃষ্টি করে।

খুরশিদ যুক্তি দেন, তালাক নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। নিকাহনামা বা বিয়ের চুক্তিপত্রে মুসলিম বধূ বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে সব রকম শর্ত রাখতে পারেন। এমনকী এক নিঃশ্বাসে তিন বার তালাক বলে বলে তাঁকে তালাক দেওয়া যাবে না— এমন শর্তও আরোপ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ হলেও তা ‘তালাক-এ-সুন্নত’ অনুযায়ী তিন মাসের সময় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে হবে।

এই কথা শুনে বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ প্রশ্ন ছোড়েন, ‘‘নিকাহনামা-য় কি এমন শর্ত থাকতে পারে যে তিন তালাক প্রথাই থাকবে না?’’ খুরশিদ হেসে বলেন, ‘‘না, সেই সুযোগ নেই।’’

প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর আজ ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আদালতের সামনে মূল প্রশ্ন হল, তিন তালাক কি শুধুই একটি প্রথা বা ব্যবহারিক রীতি, না কি এর ভিতটি ধর্মীয়। খুরশিদ বলেছেন, বিচারপতিরা যেন এমন না ভাবেন, যে তাঁরা ইসলামকে মানবিক মুখ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁরা বলতে পারেন, কোনটা সব থেকে ভাল প্রথা। প্রধান বিচারপতি খুরশিদকে বলেন, ‘‘আপনি যদি ইসলামিক প্রথার সংস্কার করতে বলেন, তা হলে কোনও পাপ হবে না।’’ বিচারপতি নরিম্যান আবার কপট ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘‘এ জন্য আদালতে না হলেও, অন্য কোথাও মূল্য চোকাতে হতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement