ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় কিংবা সংসদে জনপ্রতিনিধিদের উগ্র তাণ্ডব কখনও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। স্পষ্ট বলল, প্রতিবাদের অধিকার থাকলেও, তার জন্য সেখানে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট অথবা ভাঙচুর করা অমার্জনীয় অপরাধ। ২০১৫ সালে কেরল বিধানসভায় হওয়া তাণ্ডবের জেরে দায়ের হওয়া মামলায় শীর্ষ আদালতের এই কড়া পর্যবেক্ষণে অস্বস্তিতে পড়ল সিপিএমও। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিধানসভায় ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ বার বার শোনা গিয়েছে তাদের মুখে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেরলে কাঠগড়ায় সিপিএমের ছয় বিধায়কই।
অভিযোগ, ২০১৫ সালে কেরল বিধানসভায় অর্থ বিল পেশের সময়ে তার বিরোধিতায় কার্যত তাণ্ডব চালান সিপিএমের তৎকালীন ছয় বিধায়ক। ওই দক্ষিণী রাজ্যে বাম দলটি তখন বিরোধী আসনে। ক্ষমতায় পালাবদলের পরে ওই ছয় বিধায়কের নামে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নিতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে কেরল সরকার। সোমবার সেই মামলার রায় সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। পরবর্তী শুনানি মুলতুবি রেখেছে পরের সপ্তাহের জন্য। কিন্তু এ দিন ওই মামলার শুনানি চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে নিজেদের কড়া অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং এম আর শাহের বেঞ্চ।
কেরল সরকারের আইনজীবী রঞ্জিত কুমারকে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘প্রাথমিক ভাবে এই বিষয়ে আমরা কড়া। এক জন বিধায়কের এ ধরনের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষত তাঁর বিরুদ্ধে যেখানে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।’ কুমারের বক্তব্য ছিল, বিধানসভার মধ্যে ঘটা ঘটনার জন্য এমন ফৌজদারি মামলা দায়ের হওয়া কাঙ্খিত নয়। তা ছাড়া, এর শাস্তি হিসেবে ওই ছয় বিধায়ক তখন সাসপেন্ডও হয়েছিলেন। কিন্তু তা শুনে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার খেসারত হিসেবেই এই মামলার মুখোমুখি হতে হবে তাঁদের। শুধু তা-ই নয়, ওই ছয় বিধায়কের নামে মামলা ফিরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থের যোগ কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সর্বোচ্চ আদালত। জানতে চেয়েছে, যদি তা না-থেকে থাকে, তাহলে রাজ্য সরকার এমন আর্জি জানাচ্ছে কেন?
কেরল সরকারের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী কে এম মণির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তার প্রতিবাদ করছিলেন ওই ছয় বিধায়ক। কিন্তু বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের পাল্টা যুক্তি, ‘অর্থমন্ত্রী যেমনই হোন, অর্থ বিল তো গুরুত্বপূর্ণ!’ এবং এই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রতিবাদের অধিকার থাকলেও, তার পদ্ধতি এমন হতে পারে না বলে স্পষ্ট করে দেন তিনি।
বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা থেকে শুরু করে সংসদ— উত্তাল প্রতিবাদের সময়ে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং নষ্টের ঘটনার নজির রয়েছে প্রায় সর্বত্র। কেরল বিধানসভার ঘটনায় শীর্ষ আদালতের এই কড়া পর্যবেক্ষণের ছায়া বাকি দেশের আইনসভার উপরেও পড়বে বলে আইনজীবীদের একাংশের ধারণা।