কাছাড়ে আজ শুরু অর্থনেতিক অবরোধ

ইনার লাইন পারমিট চালুর দাবিতে আন্দোলনের নামে মণিপুরে বহিরাগতদের নির্যাতন করা হচ্ছে— এই অভিযোগে আগামী কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থনৈতিক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘নর্থ ইস্ট পিপলস অর্গানাইজেশন’ (নেপো)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২১
Share:

ইনার লাইন পারমিট চালুর দাবিতে আন্দোলনের নামে মণিপুরে বহিরাগতদের নির্যাতন করা হচ্ছে— এই অভিযোগে আগামী কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থনৈতিক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘নর্থ ইস্ট পিপলস অর্গানাইজেশন’ (নেপো)।

Advertisement

অসমের কাছাড় জেলার জিরিঘাটে আটকে দেওয়া হবে মণিপুরগামী যানবাহনকে। লক্ষ্মীপুরের কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা জানান, নির্যাতিত অ-মণিপুরিরা বাড়িঘর ছেড়ে দলে দলে কাছাড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। জমির কাগজপত্র রয়েছে, এমন মানুষকেও সে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকপত্র পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে অর্থনৈতিক অবরোধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিজেপি নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’’ অর্থনৈতিক অবরোধে অংশ নেবে এআইইউডিএফ, সিপিএম এবং সিপিআই-ও। আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটি।

মূলত দু’টি রাস্তা ধরে পণ্যসামগ্রী বাইরে থেকে মণিপুরে ঢোকে। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর এবং অসমের কাছাড় হয়ে। জিরিবাম মহকুমার মানুষ কাছাড়ের রাস্তাই ব্যবহার করেন। ইনার লাইন পারমিটের আন্দোলনকে সামনে রেখে অ-মণিপুরিদের নিগ্রহের ঘটনা জিরিবামেই বেশি ঘটছে। তাই তাঁদেরই বেশি চাপে ফেলতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন এবং পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ আজ সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। তাঁদের পাঠানো স্মারকলিপি নিয়ে আরও সাত দিন অপেক্ষা করতে বলেন। আন্দোলনকারীরা সে অনুরোধ মানেননি। তাঁরা আগামী কাল ভোর পাঁচটা থেকে অবরোধের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।

নেপোর প্রধান কর্মকর্তা সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘বাঙালি, নেপালি, হিন্দিভাষী সহ অ-মণিপুরিরা এখন সে রাজ্যে যেন বিদেশি। অথচ মায়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে। তাঁরা নীরব। এভাবে চলতে থাকলে জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।’’ তাই তাঁদের আর্জি, মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক। জিরি উপত্যকাকে কাছাড়ে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ১৮৩৩ সালের আগে এটি কাছাড়েরই অংশ ছিল বলে শোনান তিনি। ইনার লাইন পারমিট কোনও মতে চালু করা যাবে না, এই দাবি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে স্মারকপত্র দিয়েছে নেপো। দক্ষিণ করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদও ইনার লাইন পারমিটের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘একের পর সমস্যা বাড়ছে। মণিপুরের মতো নাগাল্যান্ডেও বাঙালিদের সে রাজ্য ছাড়তে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। মানুষ ভয়ে জড়সড়। নিজের দেশে এ ভাবে বাঁচা যায়?’’ মিজোরামেও নতুন করে সমস্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিটিভরা। আগে সে রাজ্যে পারমিট নিয়ে ১৫ দিন থাকা যেত। এখন ৭ দিনের পারমিট দেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে, মণিপুরে ইনার লাইন পারমিট চালু করার দাবিতে অনশন করা বিক্ষোভকারীর সংখ্যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জন। পুলিশ এক দফায় অনশনকারীদের ধরে নিয়ে গেলে নতুন করে অন্যরা শুরু করছেন অনশন। চান্ডেল, ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম, থৌবাল-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে চলছে অনশন। এমন কী জীবন বিমা নিগমের মতো দফতরের কর্মীরাও দফতরের বাইরে আইএলপির দাবিতে আন্দোলন করেন। রাজ্য সরকার সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ এদিন দিল্লি গিয়েছেন। সেখান থেকে ফেরার পরে তিনি এ নিয়ে যৌথ মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement