ছবি: রয়টার্স।
শরদ পওয়ার কেমন রাজনীতিক?
বোঝানোর চেষ্টা করেছেন প্রয়াত সুষমা স্বরাজের স্বামী স্বরাজ কৌশল। তাঁর কথায়, ‘‘যদি দিল্লি বিমানবন্দরে দেখেন শরদ পওয়ারকে, তিনি মুম্বইয়ের টিকিট কাটবেন। হাতে অবশ্য কলকাতার বোর্ডিং পাস থাকবে। আর নামবেন চেন্নাইতে।’’
‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’কে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন শরদ পওয়ার একটি আস্ত ধাঁধা। তাই আজ ঘুম ভেঙে সবাই যখন দেখলেন, গত কয়েক দিনের হিসেব উল্টে দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং অজিত পওয়ার শপথ নিয়ে ফেলেছেন, অনেকের মনে প্রথমে একটি কথাই এসেছে— এ চিত্রনাট্য ‘পওয়ার সাহেবের’। কয়েক দিন আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ৪৫ মিনিটের একান্ত বৈঠক হয়েছিল পওয়ারের। সেই বৈঠকে মহারাষ্ট্রের এই চিত্রনাট্যেরই নকশা তৈরি হয়েছিল কি না, আজ ঘরে-বাইরে চর্চা চলে তা নিয়ে। যদিও এই যুক্তি শুনে অনেকে পাল্টা বলেছেন, আখেরে তো ঘর ভেঙেছে পওয়ারেরই।
‘হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস’-এ শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে লিখলেন, ‘‘দল ও পরিবার ভেঙে গেল।’’ পরে লিখলেন, ‘‘কাকে বিশ্বাস করব? এমন ধোঁকা কখনও খাইনি। তাঁকে ভালোবেসেছি, পাশে দাঁড়িয়েছি, প্রতিদানে এই পেলাম!’’ স্পষ্ট বোঝালেন, উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়াটা তাঁর ভাই অজিতের একারই সিদ্ধান্ত। যে কথা শরদ ও টুইটে স্পষ্ট করে দেন।
বিজেপি শিবিরের দাবি
• মোট ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে
• এনসিপি-র সব বিধায়ক অজিতের সঙ্গে
• ১০ নির্দল বিধায়কেরও সমর্থন
শরদ শিবিরের দাবি
• অজিতের সঙ্গে ১০
জনের বেশি নেই।
যার মধ্যে ২-৩ জন ফিরেও এসেছেন
অজিত শিবিরের দাবি
• অন্তত ৩৫ জন বিধায়ক সঙ্গে রয়েছেন
সংখ্যা কী বলছে
• এনসিপি-র সব বিধায়ক অজিতের সঙ্গে গেলে সরকার গড়া নিশ্চিত
• এনসিপি-র ১০ জন গেলে সব নির্দলের সমর্থন প্রয়োজন, নইলে বিরোধীরা গরিষ্ঠ
• এনসিপি-র ৩৫ জন
গেলে ৫ নির্দলের সমর্থনই যথেষ্ট
• এনসিপি-র ২৫ জন
গেলে ১০ নির্দলের
কিন্তু তাতে সংশয় কাটেনি। কংগ্রেসের নেতারাও বলতে শুরু করেন, ‘‘পওয়ার সাহেব বলেন এক, ভাবেন এক, করেন আর এক।’’ পওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের ত্রিসীমানায় ঘেঁষলেন না আহমদে পটেলরা। দুই দল দাবি করল, সকলে সঙ্গে আছে। কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে শরদই গোটা নিয়ন্ত্রণ হাতে রেখেছেন। ফলে এ বার বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করে তিনি যে নতুন চাল দিলেন না, তা-ই বা কী করে বুঝব?’’
শরদও বুঝছেন, তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে, তিনি কংগ্রেস-শিবসেনার সঙ্গে আছেন। বরং ধোঁকা দিয়েছেন অজিত। এনসিপি শিবির থেকেও আজ বোঝানোর চেষ্টা হয়, কাকা-ভাইপোর অনেক দিনই বনিবনা নেই। অজিত কয়েক দিন আগে কংগ্রেস-এনসিপির বৈঠক ছেড়ে রাগের মাথায় বেরিয়ে গিয়েছিলেন। শরদ প্রায় হাতজোড় করে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। লোকসভা ভোটে তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করা না-হলে বিজেপিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অজিত। নিজে লোকসভায় না-লড়ে অজিতের ছেলেকেই প্রার্থী করেন শরদ। কিন্তু তিনি জিততে পারেননি। অজিত-ঘনিষ্ঠ নেতারা যদিও বলেন, অজিতের ছেলেকে হারিয়ে দিয়েছিলেন শরদই। অজিতকে টক্কর দিতে বিধানসভা ভোটে এক ভাইয়ের ছেলেকে কিন্তু তিনিই জিতিয়ে এনেছেন। তবু এনসিপি ছেড়ে কংগ্রেসে আসা তারিক আনোয়ারের যুক্তি, ‘‘যতই বিবাদ থাক, অজিতকেই উত্তরাধিকারী চেয়েছেন শরদ। কিন্তু এখন অজিত এনসিপি ভাঙতে চাইছেন।’’ ১৯৭৮ সালে এ ভাবেই দলে ভাঙন ধরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শরদ নিজে।
শরদ আজ বারবার উদ্ধব ঠাকরে, আহমেদ পটেলদের ফোনে আশ্বস্ত করেছেন, সব ‘ঠিক আছে’। রাতে সিংহভাগ বিধায়ককে অজিতের কবল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। ফডণবীসের সরকার ফেলে দেওয়া গেলে অজিত পওয়ারের আর গুরুত্ব থাকবে না। তখন কি সুপ্রিয়াকে আড়াই বছরের মুখ্যমন্ত্রী কিংবা উপমুখ্যমন্ত্রী করার জন্য দর কষাকষি করবেন শরদ?
তাঁর মন কে আঁচ করবে? তবে আজ দিনভর সুপ্রিয়ার সক্রিয়তা দেখে অনেকেই বলেছেন, তিনি যেন দলের নতুন ‘বস্’! বিধায়কদের সামলে রাখা থেকে শিবসেনার সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকের বন্দোবস্ত করা— গোটা দায়িত্ব সামলেছেন শরদ-কন্যাই।