হাজি আলি দরগায় মেয়েদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার পাওয়ার বিষয়ে দরগার অছি পরিষদকে প্রগতিশীল ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিল সুপ্রিম কোর্ট। অছি পরিষদের আইনজীবীও আদালতকে বললেন, প্রগতিশীল দৃষ্টিতেই বিষয়টি দেখা হবে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে অছি পরিষদ এ ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত জানাতে পারে।
হাজি আলি দরগায় মেয়েরাও সর্বত্র যেতে পারবে বলে অগস্ট মাসেই রায় দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্ট। তবে দরগার অছি পরিষদ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা ওই রায়ের
বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। তখনই হাইকোর্ট ওই রায় কার্যকর করার উপরে ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করে। এ দিন অছি পরিষদের বক্তব্য শোনার পরে সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সেই স্থগিতাদেশ জারি রেখেছে। আগামী ১৭ তারিখ প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চে মামলাটির আবার শুনানি হবে।
বিচারপতি ঠাকুর এ দিন স্পষ্ট বলেছেন, হিন্দুধর্ম হোক বা ইসলাম, প্রচলিত ধর্মীয় প্রথাগুলিকে প্রগতিশীল দৃষ্টিতে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত যে মামলাটি চলছে, তার উদাহরণও টানেন তিনি। এর পরে অছি পরিষদের আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলতে উঠে দাবি করেন, হাজি আলিতে প্রবেশাধিকারে কোনও বাধানিষেধ নেই। শুধু পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় সমাধির একটু বেশি কাছাকাছি যেতে পারেন। তখন বিচারপতি বলেন, যদি কাউকে যেতে দেওয়া না হত, তা হলে কথা ছিল। যদি পুরুষরা যেতে পারেন এবং মেয়েরা না পারেন, সেটা বৈষম্য। এর উত্তরেই সুব্রহ্মণ্যম বলেন, অছি পরিষদ বিষয়টি নিয়ে
ভাবনাচিন্তা করছে।
হাজি আলি দরগায় মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ২০১২ সালে। সেই সময় হাজি আলির কেন্দ্রস্থলে মহিলাদের প্রবেশ আচমকা নিষিদ্ধ হওয়ার পর জনস্বার্থ মামলাটি করেছিল ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’ নামে একটি সংস্থা। অছি পরিষদের যুক্তি ছিল, পুরুষ ধর্মগুরুর সমাধিস্থলের কাছাকাছি কোনও মহিলাকে যেতে দেওয়াটা ইসলামে পাপের নামান্তর। অগস্ট মাসে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি ভি এম কানাড়ে এবং বিচারপতি রেবতী মোহিতের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, ধর্মস্থানে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার অর্থ, ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ২৫ অনুচ্ছেদ ধারা লঙ্ঘন করা। ওই ধারাগুলিতেই স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভারতে বসবাসকারী যে কেউ নিজের ইচ্ছেমতো ধর্মাচরণ করতে পারেন।