এখন মরবেন না প্লিজ। ভোটের পরে ভেবে দেখুন।
পারলে খবরের কাগজে এমন একটি বিজ্ঞাপন দিয়েই বসত মুম্বই পুরসভা। মুম্বই শহরে পুরভবনটি শতাব্দী প্রাচীন। দেশের প্রথম আর এখন সবচেয়ে ধনী পুরসভা। সময় নিয়ে এক কর্তার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। শুনেছি, ক’দিন আগে এখানেও এক লড়াই চলেছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। কমিশন এফআইআর-এর হুমকিও দিয়েছিল। অপরাধ? ভোটের কাজে কিছু কর্মীকে ছাড়তে রাজি হয়নি পুরসভা।
দেখা করার সময় তো দিলেন। কিন্তু শর্ত একটাই। কথা বলবেন, নাম ছাপা যাবে না। তাই সই।
নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলতেই তিতিবিরক্ত কর্তাটি। “কথা নেই, বার্তা নেই হুটহাট করে নির্বাচন কমিশন স্কুল, হাসপাতাল, মায় শ্মশানের কর্মীদের ভোটের কাজে নামিয়ে ফেলছিল। হাসপাতালে রোগী এলে চিকিৎসা হবে না, কেউ মারা গেলে শ্মশানে শেষকৃত্য হবে না, এ কি মগের মুলুক?” চশমার উপর দিয়ে ভ্রু কুঁচকে শ্লেষ, “ভোট এলে কি সব শিকেয় উঠবে? শুনুন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে, উলুখাগড়াদের প্রাণ যাবে! বাইরে থেকে মনে হবে যেন কত যুদ্ধ। আসলে সব ভাঁওতা। সব যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। তলে-তলে সব এক।”
ভুল কোথায়? সদ্য ভোটের মুখে সিকি-শতকের সম্পর্কে ইতি টেনেছে বিজেপি-শিবসেনা। কিন্তু এই ভবনে ঢুকলে কে বলবে সে কথা? এখনও দিব্য দুই দলের জোট চলছে পুরসভায়। বিপুল বাজেট এ পুরসভার। অনেক রাজ্যের থেকেও বেশি। বিরোধীরা পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে সরব। প্রশ্নও তুলছে, এ কেমন সম্পর্ক বাপু? বিধানসভায় বিচ্ছেদ, আর পুরসভায় সহবাস! তবু ছাড়তে কে চাইছে?
মহারাষ্ট্রের ভোট-পার্বণে এমন হাজারো হেঁয়ালি। কী হল, কী হচ্ছে, কী হতে চলেছে - কিচ্ছুটি বোঝার জো নেই। কার সঙ্গে কার বিচ্ছেদ হচ্ছে, কে কোথায় সহবাস করছে, তা বোঝা মুশকিল। এ ভোটে সবাই রাজা। কেউ সরাসরি রাজা হতে চান। কেউ রাজা বানিয়ে রাজা হওয়ার অপেক্ষায়।
এবিপি নিউজ ও এ সি নিয়েলসেনের সমীক্ষা বলছে, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সরকার গড়তে আরও ২৫ আসন চাই। তার উপায় দুটি। এক, ফের ২৫ বছরের পুরনো সঙ্গী শিবসেনার হাত ধরা। নয়তো শরদ পওয়ারের দল। উদ্ধব ঠাকরে ও শরদ পওয়ার। তাঁরাই ভোটের ‘কিং-মেকার’। সরকার গড়ার চাবি এখন এই দু’জনের হাতেই। আর দু’জনেই এখন ওত পেতে রয়েছেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। কখন সরকার গড়তে তাঁদের দরকার পড়বে আর নিজেদের শর্ত চাপিয়ে দেবেন বিজেপির উপরে।
চট করে দু’টি সাম্প্রতিক বিস্ফোরক মন্তব্যে চোখ বোলানো যাক। একটি রাজ ঠাকরের। বলেছেন, “বিজেপি-শিবসেনা জোট ভাঙার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন শরদ পওয়ার। যাতে ভোটের পর বিজেপির সঙ্গে যেতে পারেন মরাঠা স্ট্রংম্যান।” আরও এক ধাপ এগিয়ে সদ্য মুখ্যমন্ত্রী পদ খোয়ানো কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ বলছেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙেছেন শরদ পওয়ার। যাতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করিয়ে রাজ্যকে বিজেপির হাতে উপহার দেওয়া যায়।” কংগ্রেসের দাবি, মহারাষ্ট্র মোদীকে দেওয়ার বদলে কেন্দ্রে মন্ত্রী হবেন পওয়ার। গোপীনাথ মুন্ডের মৃত্যুর পর এমনিতেই খালি আছে মন্ত্রক। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগেই মন্ত্রিসভার রদবদল করবেন নরেন্দ্র মোদী। পওয়ারও সীমান্তে পাক হামলার কথা তুলে রোজ জানাচ্ছেন, মোদী কেন কাউকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বানাচ্ছেন না?
মরাঠা স্ট্রংম্যানের এটাই কি কৌশল? শরদ পওয়ারের গড় বারামতীতে কান পাতলে কিন্তু শোনা যাবে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্যও বসে রয়েছেন পওয়ারের ভাইপো অজিত। নিজের কন্যা সুপ্রিয়া সুলের রাজনৈতিক জীবনটিও গুছিয়ে দিতে চান পওয়ার। মহারাষ্ট্রে আড়াই বছর করে এনসিপি ও কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব নিয়েও সনিয়া গাঁধীর কাছে ছুটে যান পওয়ার। কিন্তু গাঁধী পরিবার রাজি হয়নি। বরং হারলে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে একলা চলোর পথ ধরাই শ্রেয় মনে করেছেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু এনসিপি-র সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কোনও ইঙ্গিত দিতে রাজি নয় বিজেপি। তাই আশায় আছেন উদ্ধব ঠাকরে। ছোট-বড় সব বিজেপি নেতাই শরদ পওয়ারের চেয়ে উদ্ধবকে ভোট-পরবর্তী শরিক হিসেবে এগিয়ে রাখছেন। ভাই রাজ ঠাকরের সঙ্গে উদ্ধবের হাত মেলানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কোনও শিবিরই। বিজেপি বুঝছে, ভোটের পরেও বাকি স্নায়ুর লড়াই।