বাজেট অধিবেশনের আগে সংসদে অমিত শাহ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনেই বিরোধী শিবিরের আক্রমণের নিশানায় অমিত শাহ। দিল্লিতে হিংসা রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সংসদের উভয় কক্ষে সরব হন বিরোধীরা। দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। শাহ আজ অবশ্য গোটা দিনের অধিকাংশ সময় সংসদে নিজের ঘরে কাটান। একের পর এক বৈঠক করেন। তবে লোকসভা বা রাজ্যসভামুখো হননি।
গত সপ্তাহের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পরে দিল্লির পরিস্থিতি এখন খানিক শান্ত। যদিও গত রাতেই রাজধানীর অন্যান্য প্রান্তে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। শাহের সঙ্গে আলোচনা করতে বেলা ১১টা নাগাদ সংসদে আসেন দিল্লির উপরাজ্যপাল অনিল বৈজল। পরে শাহ দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বিজেপি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে দলের প্রস্তুতি ছাড়াও দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন দু’জনে।
দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। তাই সরকারকে চাপে রাখতে আজ লোকসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে দিল্লি সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন বিরোধীরা। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘দিল্লির ঘটনার জন্য কারা দায়ী, কার ভুলে এ ভাবে হিংসা ছড়াল, তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক।’’ কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় সরকার।
তার পরে লোকসভায় দফায় দফায় দিল্লির হিংসা নিয়ে মুখ খোলার চেষ্টা করে বিরোধী পক্ষ। এমনকি অর্থ মন্ত্রকের ‘বিবাদ সে বিশ্বাস বিল’ নিয়ে আলোচনার সময়েও এ নিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করে তারা। অধীর বলেন, ‘‘দিল্লি এখনও জ্বলছে, মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে, সেখানে সরকার চাইছে বিল নিয়ে আলোচনা করতে। আমরা চাই দিল্লি ষড়যন্ত্রের পিছনে যারা আছে তাদের সামনে আনা হোক।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বিরোধীদের এক ইঞ্চি বাড়তি জমি দিতে নারাজ শাসক শিবির। আর শাহকে চাপে রাখতে সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ বিরোধী দলগুলি। দু’পক্ষের এই চাপান-উতোরের মধ্যে স্পিকার ওম বিড়লা কার্যত স্বীকার করে নেন যে, বিরোধীদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। তবে তিনি বলেন, ‘‘আলোচনার উপযুক্ত সময় এটা নয়। পরিস্থিতির আরও উন্নতি হওয়ার পরে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হবে।’’ যা মানতে চাননি বিরোধী নেতারা।
অন্য দিকে, রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কেন্দ্রের দায়িত্ব। কিন্তু কার্যত কেন্দ্রের নাকের ডগায় তিন দিন ধরে দাঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি।’’ লোকসভার মতো এখানেও শাহের পদত্যাগ দাবি করে সরব হন বিরোধী নেতারা। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুও মেনে নেন, ‘‘বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। তবে আলোচনার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। তার পরে আলোচনা।’’
বিরোধীরা শাহের পদত্যাগ ও সরকারের জবাবদিহি চেয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে দিনের মতো রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। পরে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোটা দিল্লিতে এখন আতঙ্কের পরিবেশ। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা নিদেনপক্ষে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর জনগণকে প্রকাশ্যে বার্তা দিয়ে আশ্বস্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু কেউই তা না-করায় ভয় আরও জাঁকিয়ে বসেছে।’’
শাসক শিবিরও বুঝতে পারছে, সংসদে এ নিয়ে আলোচনা আজ না-হোক, কাল করতেই হবে। না-হলে, জনমানসে নেতিবাচক বার্তা যাবে। বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘এ-রকম একটি বিষয়ে সংসদে আলোচনা করা ছাড়া উপায় নেই। দলও চায় আলোচনা হোক। তা হলে অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে। বিরোধী শিবিরের কারা ওই সংঘর্ষে উস্কানি দিয়েছিল, তা-ও সামনে আসবে। কিন্তু আমাদের যুক্তি হল, দিল্লির পরিস্থিতি এখনও স্পর্শকাতর। পরিস্থিতি শান্ত হলে তবে আলোচনা।’’
সরকারের ওই যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টিকে ঠান্ডা ঘরে পাঠাতে আলোচনা পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে সরকার।