জম্মু-কাশ্মীরে গত তিন বছর ধরে রাষ্ট্রপতি শাসন রয়েছে। যে লক্ষ্যপূরণে নরেন্দ্র মোদী সরকার জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা দেয় সেই লক্ষ্য গত ৩৩ মাসে ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে কি না তা জানতে চান কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি উত্তর হল না।
ফাইল চিত্র।
বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল ক্ষমতায় এলে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে। আট বছর পরে ক’জন কাশ্মীরি পণ্ডিত ফিরে গিয়েছেন তা নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে জানতে চাইলেন বিরোধীরা। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরে দ্রুত নির্বাচন করিয়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরব হলেন তাঁরা।
মঙ্গলবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনেই ছিল জম্মু-কাশ্মীরের বাজেট পেশ ও তা নিয়ে নিয়ে আলোচনা। বাজেট পেশের দিনেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করা যায় না। ওই নিয়মকে আজকের জন্য স্থগিত রেখে বাজেট পেশ ও তা নিয়ে আলোচনা করতে সংসদে প্রস্তাব আনেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তীব্র প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। যদিও স্পিকার শেষ পর্যন্ত নির্মলাকে ওই বাজেট পেশ ও তা নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেন।
জম্মু-কাশ্মীরে গত তিন বছর ধরে রাষ্ট্রপতি শাসন রয়েছে। যে লক্ষ্যপূরণে নরেন্দ্র মোদী সরকার জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা দেয় সেই লক্ষ্য গত ৩৩ মাসে ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে কি না তা জানতে চান কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি উত্তর হল না। উল্টে কেবল ভারত-পাকিস্তানই নয়, লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে নয়াদিল্লি।’’ মণীশ বলেন, ‘‘সংসদে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ দু’জনেই জম্মু-কাশ্মীরকে দ্রুত রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকার এখনও সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি।’’ জম্মু-কাশ্মীরে কবে বিধানসভা ভোট হবে তা আজ জানতে চান বিএসপি সাংসদ দানেশ আলি, তৃণমূলের সৌগত রায় থেকে এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে। নির্মলা জানান, ঠিক সময়েই হবে।
করোনা সংক্রমণে টলমল দেশের অর্থনীতি। কাজ হারিয়েছেন দেশের বহু মানুষ। তাই আজ বিতর্কে অধিকাংশ সাংসদই সরকারের কাছে জানতে চান বেকারত্ব দূর করতে উপত্যকায় কেন্দ্র কী ধরনের পদক্ষেপ করেছে? এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের প্রশ্ন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের বেকারত্ব ২৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। সাত বছরে কেন্দ্র কী করেছে কাশ্মীরের জন্য!’’ তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় উপত্যকায় যখন-তখন ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার যে প্রবণতা প্রশাসন তৈরি করেছে তার সমালোচনায় সরব হন। তাঁর মতে এতে ছোটদের পড়াশোনার যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনই মার খাচ্ছে ব্যবসা। জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সিএমইআইয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন, ‘‘দেশে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরে বেকারত্বের হার ১৩.২ শতাংশে নেমে এসেছে। পর্যটন ব্যবসা বেড়েছে কয়েক গুণ।’’ কেবল গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে ৫০ লক্ষ পর্যটক পা দিয়েছেন বলে দাবি করেন নির্মলা।
প্রশ্নের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পণ্ডিত পুনর্বাসন নীতি। বিএসপি সাংসদ দানেশ আলি থেকে এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে-সহ বিরোধীদের সকলেই জানতে চান, ঠিক ক’জন কাশ্মীরি পণ্ডিত পুর্নবাসিত হয়েছেন। সদ্য এসেছে ‘কাশ্মীর ফাইলস’ নামে একটি সিনেমা। যেখানে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতড়নের বিষয়টি দেখানো হয়েছে। এ ধরনের সিনেমা আসলে সমাজে বিবাদ বাড়িয়ে তোলে বলে মন্তব্য করেন দানিশ আলি। সুপ্রিয়া সুলে জানান, ‘‘সরকার যদি সত্যিই পণ্ডিতদের কথা ভাবত, তাহলে বাজেটে পণ্ডিতদের উল্লেখ থাকত। কিন্তু কোথাও নেই।’’ পরে বিতর্কের জবাবে নির্মলা জানান, ‘‘ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পণ্ডিত কাশ্মীরে ফিরে এসেছেন। পণ্ডিতদের পুর্নবাসনের কাজ চলছে।’’ তিনি জানান, কাশ্মীরে যে পণ্ডিতেরা ফিরছেন তাঁদের জন্য ১০২৫টি নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করেছে সরকার। আরও ১৪৪৮টি বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। যাঁরা আসছেন তাঁদের নগদ টাকা, খাবার সরবরাহ করছে সরকার। উপত্যকায় ৪৬৭৮ জন পণ্ডিতের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মলার বক্তব্যের পরে কিছু প্রশ্নে সরকারের ব্যাখ্যা চান বিরোধীরা। তার সুযোগ না মেলায় ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপি-র সাংসদেরা ওয়াক আউট করেন।