গত নভেম্বরে কলকাতা থেকে আবুধাবি ঘুরে সান ফ্রান্সিসকো গিয়েছিলেন চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
আবুধাবি থেকে যেতে সময় লেগেছে প্রায় ১৫ ঘণ্টা। প্রবীণ চিকিৎসক নিজেকে চনমনে রাখতে হাল্কা নিরামিষ খাবার আর প্রচুর জল খেয়েছিলেন উড়ানে। তাঁর কথায়, ‘‘এত ক্ষণের উড়ানে মশলাদার খাবার একেবারে বর্জন করা উচিত।’’
সারা বিশ্বের যাত্রীদের মধ্যে খাবার নিয়ে সমীক্ষা করে সম্প্রতি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সও জানতে পেরেছে, মশলাদার খাবার নিয়ে বেশির ভাগ যাত্রীরই আপত্তি রয়েছে। এয়ারলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারভিন ট্যান জানাচ্ছেন, তাঁরা এখন সুস্বাদু অথচ স্বাস্থ্যকর খাবার বানানোর জন্য ৮ জন আন্তর্জাতিক মানের শেফ-এর পরামর্শ নিচ্ছেন। স্যালাড, কম ক্যালোরির রুটি, পাঁউরুটি, সব্জি, মাছ, বিনস, বরবটি— এই সব পুষ্টিকর খাবারই অগ্রাধিকার পাচ্ছে তালিকায়। কলকাতা থেকে উড়ান চালানো এমিরেটস জানাচ্ছে, প্রায় ৩০ ধরনের খাবারের মেনু রয়েছে তাদের। বাচ্চাদের জন্য বেবি-মিল থেকে শুরু করে কম-ক্যালোরির খাবার, কম-কার্বোহাইড্রেটের খাবার সবই বেছে নেওয়ার সুবিধা থাকে। যাত্রীদের শুধু আগাম জানিয়ে রাখতে হয়।
দূরপাল্লার উড়ান মানে ৪০-৪৫ ফুট উপরে গড়ে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা কাটানো। বিমান সংস্থাগুলির যুক্তি, এই ধরনের উড়ানে শরীরে জলাভাব ও ক্লান্তি আসে। সহজপাচ্য খাবারই তখন শরীরের জন্য ভাল। সুকুমারবাবুর কথায়, ‘‘আমি তো ঘণ্টাখানেক অন্তর অন্তর উঠে হাঁটতে শুরু করছিলাম। সেটাও খুব জরুরি।’’
এ তো গেল দূরপাল্লা। ভারতের আকাশে উড়ে বেড়ানো দুই-আড়াই ঘণ্টার অভ্যন্তরীণ উড়ানে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
ডায়েটেশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, কম দূরত্বের উড়ানেও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। তাঁর মতে, বিমানে ওঠা মানেই তো বায়ুচাপ ও উচ্চতার তারতম্য। অনেক যাত্রীরই বমি-বমি ভাব থাকে। বিমানের ভিতরে বদ্ধ অবস্থায় একটি আসনে বসে থাকতে হয়। রেশমীর কথায়, ‘‘এই সময়ে চর্ব্য-চোষ্য না খেয়ে হাল্কা খাবার খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মশলাদার খাবার খেয়ে আচমকা শরীর খারাপ হয়ে গেলে ৩৫ হাজার ফুট উপর থেকে হাসপাতালে পৌঁছতেও তো সময় লাগবে।’’
কিন্তু জেট-ইন্ডিগো-স্পাইসজেটের মতো সংস্থাগুলি সমস্বরে জানাচ্ছে, ভারতীয়রা কিন্তু একটু মশলাদার খাবারই বেশি পছন্দ করেন। তাঁদের খুশি রাখতেই একটু সুস্বাদু মশলাদার খাবার বিমানে রাখা হয়। তবে কেউ চাইলে আগে থেকে ‘অন্য ধরনের’ খাবার চেয়ে রাখতে পারেন। স্পাইসজেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রি-বুক করলে আমরা ডায়াবেটিক খাবারও দিই। তবে আমাদের যাত্রীদের মধ্যে খুব অল্প জনই আলাদা করে কম নুন, কোলেস্টেরল বা কম কার্বোহাইড্রেটের খাবার চান।’’
কলকাতার যে পাঁচতারা হোটেল থেকে বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ উড়ানে খাবার সরবরাহ করা হয়, তাঁর এক কর্তা জানালেন, সাধারণত ইন্ডিগো বা স্পাইসজেটের মতো সস্তার বিমানেই যাত্রীদের খাবার কিনে খেতে হয়। ওই বিমান সংস্থাগুলির খাবারের তালিকায় স্যান্ডউইচ, কেক-এর মতো শুকনো খাবারই থাকে। বাকি বেশির ভাগ বিমানসংস্থা এখন আলাদা করে ডায়াবেটিক খাবার বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। আপাতত বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন এবং টিকিট কাটার সময়েই ওই খাবার বেছে নিতে হচ্ছে। ইকনমি ক্লাসেও যাতে ওই ধরনের খাবার দেওয়া হয় তার চিন্তাভাবনাও চলছে।
কী ধরনের খাবার পরিবেশন করা উচিত কম পাল্লার উড়ানে?
ডায়েটেশিয়ান সুদেষ্ণা মৈত্র নাগের পরামর্শ, হাল্কা সাদা তেলে রান্না জিরা-রাইস, বেকড্ চিকেন বা ফিশ, দই মাছ বা দই-মুরগি এবং মিক্সড ভেজিটেবল দিয়ে মেনু সাজালে সমস্যা কম হবে। তাঁর কথায়, ‘‘দই হজমে সাহায্য করে। এই মেনুতে তেল খুব কম লাগে। অথচ প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট সবই থাকে।’’