ভোটমুখী পঞ্জাবে নিজের শেষ জনসভায় বেনজির ভাবে আম আদমি পার্টিকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশ্ন উঠেছে, পঞ্জাবে অকালি-বিজেপির নড়বড়ে নৌকাকে তীরে ভেড়ানোর চেষ্টাতেই কি তাঁর এই নয়া কৌশল? বিজেপি নেতারাও তা স্বীকার করে নিয়ে বলছেন, সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই রাহুল গাঁধীর বদলে অরবিন্দ কেজরীবালকে আক্রমণের মূল নিশানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মোদী।
কোটকাপুরার বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, দিল্লিবাসী ‘বহিরাগত’ আপ পঞ্জাবে সরকার গড়লে গুরুতর সমস্যায় পড়বে গোটা দেশ। কারণ, সীমান্ত রাজ্য পঞ্জাবে সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় বসে রয়েছে পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘পঞ্জাবে বহিরাগত এই দল দিল্লিতেই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। এ রাজ্যের মানুষের উচিত এদের সরাসরি দিল্লিতে ফেরত পাঠানো।’’
আপের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মোদী। সম্প্রতি তাঁর কথায়, ‘‘হরসিমরত কৌর বাদলজি (অকালি প্রধান প্রকাশ সিংহের পুত্রবধূ) আমাকে জানালেন, এই দল প্রকাশজিকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছে।’’ মোদীর মতে, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ী ও প্রকাশ সিংহ বাদলকে কখনও নোংরা ভাষা ব্যবহার করতে দেখিনি। কিন্তু যারা অণ্ণা হজারে সম্পর্কেও বাজে কথা বলতে পারে তাদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করাটা উচিত নয়।’’ মোদীর মতে, ক্ষমতায় এলে নানা অভিযোগের তদন্ত করানোর কথা বলেন অনেক রাজনীতিকই। কিন্তু অকালি জমানার দুর্নীতির জন্য কোনও ব্যক্তিকে (প্রকাশ সিংহ বাদল) জেলে পুরব, এটা বলা একেবারেই ঠিক নয়। এই ভাষা গণতন্ত্রের নয়, একনায়কের।
মোদী সরকারই নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছে আপ। মোদীর বক্তব্য, ‘‘পঞ্জাব ও গোয়ায় এক দিনে ভোট করাচ্ছে কমিশন। তাই এখন এমন অভিযোগ তুলেছে ওই দল। কারণ, ওদের হার নিশ্চিত।’’
কিন্তু হঠাৎ আপকে কেন মূল নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী?
বিজেপি সূত্রে খবর— আপকে আক্রমণ করলে যদি কেজরীবালের দল বেশি ভোট পায়, তবে কংগ্রেসের ভোট ভাগ হবে। সে ক্ষেত্রে ভোট কাটাকাটির সুযোগে অকালি-বিজেপি জোট ফের ক্ষমতা দখলের সুযোগ পেতে পারে।
কংগ্রেসকে অবশ্য পুরোপুরি ‘ওয়াক ওভার’ দেননি প্রধানমন্ত্রী। ‘বিলাসবহুল জীবনযাত্রা’-র কথা বলে ঠুকেছেন পাটিয়ালার রাজপরিবারের সদস্য ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে। বোঝাতে চেয়েছেন, কংগ্রেস জমানায় সব পঞ্জাবি যুবককেই ‘জঙ্গি’ তকমা দেওয়া হয়েছিল। ‘জঙ্গি কার্যকলাপে’র সেই অন্ধকার রাস্তায় ফিরে যাওয়া উচিত নয়।
অকালি জমানায় দুর্নীতির মূল অভিযোগ প্রকাশ সিংহের ছেলে উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিংহের বিরুদ্ধে। বিজেপি সূত্রের মতে, তাই তাঁর নাম উল্লেখ না করে কৌশলে বার বার প্রকাশ সিংহের ভাবমূর্তিকেই সামনে এনেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘চৌধরি চরণ সিংহ ও চৌধরি দেবীলালের পরে যদি কোনও নেতা কৃষকদের কথা ভেবে থাকেন, তবে তিনি প্রকাশ সিংহ।’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘ইউপিএ সরকার প্রকাশকে বাধা দিয়েছিল। তিনি ধৈর্য হারাননি। এখন কেন্দ্র ও বাদল সরকারের সহযোগিতার ফলে পঞ্জাব নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছে।’’