ছবি: পিটিআই।
আর্থিক বৃদ্ধি বাড়াতে হলে রফতানি বাড়তেই হবে। অথচ সেখানেই ভাটার টান। তবু চিনের পথে হেঁটে টাকার দাম কমাবে না ভারত। এ বিষয়ে কার্যত একমত নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
আন্তর্জাতিক মন্দা ও দেশীয় অর্থনীতির দুরবস্থা কাটাতে চিন নিজের মুদ্রার দাম কমিয়েছে। জাপান ও ইউরোপীয় ব্যাঙ্কগুলি আবার সুদের হার কমিয়েছে। তার জেরে বিশ্বের অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারেই টালমাটাল অবস্থা দেখা গিয়েছে। এ দেশেও রফতানিকারীদের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমানোর ব্যবস্থা করুক। সুদের হার শূন্যের আশেপাশে নিয়ে আসা হোক। যাতে বিশ্বের বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম কমে। রফতানিতে গতি আসে। কারণ, ইউরোপের বাজারে মন্দার ফলে গত ১৪ মাস টানা দেশের রফতানি নেমেই চলেছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন এই চাপের কাছে নরম হননি। আজ তাঁর পাশে দাঁড়ালেন মোদীও। দিল্লিতে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর ‘অ্যাডভান্সিং এশিয়া-ইনভেস্টিং ফর দ্য ফিউচার’ সম্মেলনে দু’জনেই আজ একই সুরে জানিয়েছেন, ভারত কৃত্রিম ভাবে টাকার দাম কমানো বা সুদের হার তলানিতে নিয়ে আসার পথে হাঁটবে না। মোদীর কথায়, ‘‘অন্যের ক্ষতি করে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নিজেদের লাভ করতে চাই না। প্রতিবেশীদের পথে বসানোর নীতিও নিই না। আমাদের চালু খাতার ঘাটতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও কখনও মুদ্রার দাম কমায়নি ভারত।’’ একই অনুষ্ঠানে রাজন যুক্তি দেন, সুদের হার তলানিতে নিয়ে যাওয়ার মতো অপ্রচলিত নীতি নিয়ে কতখানি লাভ হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ’টুকু বলাই যায় যে এর লাভ ক্রমশ কমছে। ক্ষতি বাড়ছে।’’
সুদ নীতির বদলে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কার বেশি জরুরি বলেই রাজনের মত। তাঁর বক্তব্য, শিল্পোন্নত দেশগুলির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররাও জানেন যে আর্থিক সংস্কার না করে শুধুই সুদ-নীতি দিয়ে বৃদ্ধির হার বাড়ানো যায় না। আর মোদী জানান, সরকার পরিকাঠামো, কৃষির মতো ক্ষেত্রে আরও বেশি লগ্নি করেই আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে চায়। মোদী বলেন, ‘‘বেসরকারি লগ্নি যখন আসছে না, তখন সরকারি লগ্নি জরুরি। তাই কৃষির পাশাপাশি রেল-সড়কের মতো পরিকাঠামোয় জোর দিয়েছি। এর ফলে অর্থনীতির গতি বাড়বে।’’
পরিকাঠামোয় ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়েও মোদী সরকার যে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই বেঁধে রেখেছেন, তা নিয়ে আজ সন্তোষ প্রকাশ করেন রাজন। অর্থনীতিবিদরা মনে করছিলেন, এর ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর আর এক দফা সুদের হার কমানোর চাপ বাড়বে। তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি রাজন। বাজেটের পরে আজ প্রথম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী জেটলি। তার পরেই রঘুরাম বলেন, ‘‘রাজকোষ ঘাটতি যে ৩.৫ শতাংশে বেঁধে রাখা হয়েছে, তাতে শেয়ার বাজার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বস্তি পেয়েছে। কিন্তু সুদের হারে এর কী প্রভাব পড়বে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’ আগামী ৫ এপ্রিল সুদ নীতির পর্যালোচনায় বসবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে যে ভাবে বাধা আসছে, তা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। বিশেষ করে টানা তিন মাস শিল্পোৎপাদনের সূচকের অধোগতি রঘুরামের মতে ‘আশানুরূপ নয়’ তো বটেই ‘হতাশাজনক’ও বটে।
আইএমএফ-এর সম্মেলনে অবশ্য মোদী আজ দাবি করেছেন, আর্থিক নীতির সুস্থিতির জোরে ভারত এখন গোটা বিশ্বেই আশার আলো। আইএমএফ-র প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দেও মন্তব্য করেছেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে মন্দার মধ্যেও ভারতের তারা চকমক করছে।’’ আগামী বছর অক্টোবরে আইএমএফ-এ বিভিন্ন দেশের অংশীদারি পুনর্বিবেচনা হওয়ার কথা। এই অংশীদারির ভিত্তিতেই ঠিক হয় কোন দেশ কতটা ঋণ পাবে, কতটা গুরুত্ব পাবে সেই দেশের মতামত। ভারতের অর্থনীতির গতি বাড়ছে— এই যুক্তিতে মোদী আজ আইএমএফ তহবিলে ভারতের অংশীদারি আরও বাড়ানোর পক্ষে আগাম সওয়াল করেছেন।