স্বজন আছে পোষণ নেই, প্রচার মোদীর

আড়াই বছরে নিজের পরিবারকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ভোটের তাড়নায় সেই পরিবারকেই এখন যুদ্ধে নামাতে হল নরেন্দ্র মোদীকে। যদিও একটু অন্য ভাবে। ভালোয়-মন্দয় উত্তরপ্রদেশে যাদব পরিবারই লাগাতার প্রচারে রয়েছে।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদীর মা। (ফাইল চিত্র)

আড়াই বছরে নিজের পরিবারকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ভোটের তাড়নায় সেই পরিবারকেই এখন যুদ্ধে নামাতে হল নরেন্দ্র মোদীকে। যদিও একটু অন্য ভাবে।

Advertisement

ভালোয়-মন্দয় উত্তরপ্রদেশে যাদব পরিবারই লাগাতার প্রচারে রয়েছে। ভোটের টিকিট দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্নেও বাবা, ছেলে, কাকা, দ্বিতীয় স্ত্রী তথা সৎমা, পুত্রবধূ, ভাইপো— গোটা পরিবারই ঘুরপাক খাচ্ছে সমাজবাদী পার্টির ভরকেন্দ্রে। সেই হাইভোল্টেজ নাটকে ফিকে হয়ে যাচ্ছে মোদী ও তাঁর যাবতীয় প্রয়াস। আর কংগ্রেসে তো যাবতীয় ভাবনা ঘুরপাক খায় একটি পরিবারকে ঘিরেই। ভোটের মুখে সেই পারিবারিক ‘কহানি মে টুইস্ট’ আনতে বিজেপি সামনে নিয়ে এল ‘মোদী পরিবার’!

মোদী দিল্লির মসনদে বসার পর থেকে তাঁর মোদী পরিবারের কথা কখনওই শোনা যায়নি বিজেপির মুখে। তাঁদের নিয়ে বড় জোর বিক্ষিপ্ত কিছু খবর হয়েছে। কখনও-সখনও গাঁধীনগরে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আড়াই বছরে এক বার বৃদ্ধা মাকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এনে রেখেছিলেন মোদী। নোট-বাতিলের পর নব্বই পেরনো মাকে লাইনে দাঁড়াতেও দেখা গিয়েছে। আবেগঘন গলায় মোদী বরং বলেছেন, দেশের জন্য তিনি ঘর-পরিবার ছেড়েছেন। উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রচারে কিন্তু সেই পরিবারই বেরিয়ে এল মোদীর ঝুলি থেকে।

Advertisement

বিজেপি একটি ভিডিও তৈরি করে প্রচার শুরু করেছে, যেখানে দেখানো হচ্ছে, নিজের পরিবারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আবেগ থাকলেও আজ পর্যন্ত তাঁদের ক্ষমতার সুযোগ দেননি। বড় ভাই সোমভাই মোদী অবসর নিয়েছেন। ছোট ভাই পঙ্কজ গুজরাত সরকারের সামান্য চাকরি করেন। আর এক ভাই অমৃতভাই বেসরকারি সংস্থায় ফিটারের কাজ করেন, কোনও দিন বিমানে চাপেননি। আর এক ছোট ভাই প্রহ্লাদ রেশন দোকান চালান। খুড়তুতো ভাই ভরত পেট্রোল পাম্পে তেল দেন। তাঁর স্ত্রী রমীলা সংসার চালান খাবার বিক্রি করে।

এখানেই শেষ নয়। খুড়তুতো ভাইদের মধ্যে অশোক ৮ ফুট বাই ৪ ফুট দোকান-ঘরে বসে ঘুড়ি আর খাবার বিক্রি করেন। চন্দ্রকান্ত গোশালার সহায়ক, অরবিন্দ বাতিল জিনিসপত্রের কারবার করেন ও ভোগিলাল মুদির দোকান চালান। কাকা কান্তিলাল, জয়ন্তীলাল শিক্ষক হিসেবে অবসর নিয়েছেন। এই জয়ন্তীলালের মেয়ে লীনার বিয়ে হয়েছে এক বাস কন্ডাক্টরের সঙ্গে।

বিজেপির বার্তাটি স্পষ্ট। তা হল, স্বজন মোদীরও আছে। কিন্তু স্বজনপোষণে তিনি নেই। মুলায়ম পরিবারে সকলেই ক্ষমতার ভাগ নিয়ে কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত। গাঁধী পরিবারের জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ। আর মোদীর পরিবারের জামাই বাসের কন্ডাক্টর। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের কোনও সুবিধা দেননি। রাহুল গাঁধী বারবার বলেন, মোদী ৫০-৬০ জন শিল্পপতির কথা ভাবেন। বিজেপির পাল্টা দাবি, ৫০-৬০ জন নন, গোটা দেশই তাঁর পরিবার।

ক’দিন আগে মায়ের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে মোদীর টুইটের কটাক্ষ করেছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর বক্তব্য, হিন্দু সংস্কৃতিতে মা, স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে রাখাই রেওয়াজ। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনটি বেশ বড়, প্রয়োজন হৃদয়টি আরও বড় করার। আর অখিলেশ সিংহ যাদব এখন প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, ‘‘যে পরিবারকে মোদী এত দিন অচ্ছুত করে রেখেছিলেন, আজ নিজের স্বার্থেই তাকে ব্যবহার করছেন। তিনি যে আসলে কতটা নিঃস্বার্থ, এর থেকেই সেটা স্পষ্ট।’’ সমাজবাদী পার্টিরই আর এক নেতা নাভেদ সিদ্দিকি বলেন, ‘‘পরিবারকে টেনে রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই তো ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement