বালুরঘাটে নির্বাচনী জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি:পিটিআই।
বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ দিন, দিল্লি কী ভাবে দখল করতে হয়, তৃণমূল জানে। বহরমপুরের সভা থেকে শুক্রবার বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অধীর চৌধুরীর দুর্গে দাঁড়িয়ে এ দিন মমতা ফের দাবি করেছেন, মুর্শিদাবাদ জেলায় আরএসএস-এর সাহায্য নিয়ে লড়ছে কংগ্রেস। বিজেপি কিছুতেই ক্ষমতায় ফিরবে না বলে তিনি ফের জোর গলায় দাবি করেছেন এ দিন। আঞ্চলিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলই সরকার গড়বে বলেও মমতা মন্তব্য করেছেন।
‘বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ’— এই স্লোগান বেশ কয়েক মাস আগেই বেঁধে দিয়েছিলেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। দলের সভা, মিছিল, পোস্টার— সবেতেই এই স্লোগানের সদর্প উপস্থিতি তার পর থেকেই। নির্বাচনী জনসভাগুলিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বার বার বাংলার সব আসনে তৃণমূলকে জেতানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। তৃণমূলই এ বার দিল্লির সরকার গঠনের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে চলেছে বলেও গত কয়েক দিন ধরে খুব জোর দিয়ে তিনি দাবি করতে শুরু করেছেন।
বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আপনার ভোটটা তৃণমূল কংগ্রেসকে দিন। তার কারণ এ বারের বাংলা সালটা হচ্ছে ১৪২৬। ১৪২৬, বাংলা চায় বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ।’’ এ রাজ্যের সব আসনে জিততে পারলে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে মুখ্য ভূমিকা যে তৃণমূলই নেবে, সে ইঙ্গিতও নিজের ভাষণে এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিয়াল্লিশটা সিট দিন, দিল্লি কী ভাবে কাঁপাতে হয় আমরা জানি। দিল্লি কী করে দখল করতে হয় আমরা জানি। দিল্লিতে কী ভাবে সরকার গড়তে হয় আমরা জানি।’’
আরও পড়ুন: নিজের বাড়িতেই আক্রান্ত লকেট, মারধর দমদমেও
সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রে অবিজেপি-অকংগ্রেস সরকার গঠনের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। ফেডেরাল ফ্রন্টের কথা বিভিন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বার বার বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাতে সাড়াও পেয়েছেন। অনেকগুলি আঞ্চলিক শক্তিই তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে। এর মধ্যে অনেকগুলি দলই যদিও বিজেপির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষ্যে কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখার পক্ষপাতী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানটা একটু ভিন্ন। কংগ্রেস তাঁর কাছে অস্পৃশ্য নয়। যে সব রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী, বিজেপি বিরোধিতার স্বার্থে সেখানে কংগ্রেসকে ভোট দিতে বলছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি বিরোধী সরকারের নেতৃত্ব সব সময় কংগ্রেসকেই ছাড়তে হবে— এমন কোনও বাধ্যবাধকতায় মমতা বিশ্বাসী নন। তিনি বার বারই আঞ্চলিক দলগুলিকে সামনে রেখে সরকার গঠনের কথা বলছেন তাই।
তাঁর প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টযদি সরকার গড়ে, তা হলে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন— এমন কোনও মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি। তৃণমূলকেই প্রধান শাসক দল হিসেবে গ্রহণ করে সরকার গঠন করতে হবে— এমন কোনও শর্তও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাখেননি। কিন্তু এ বার সরকার গঠনে বাংলা আর উত্তরপ্রদেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মন্তব্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথাও বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, তৃতীয় শক্তি সরকার গঠন করলে যে দু’তিনটি দল সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেবে, তার মধ্যে তৃণমূল অন্যতম।
আরও পড়ুন: মোদীর মতো ভুয়ো নন, পিছড়ে বর্গের আসল নেতা মুলায়ম, ঐতিহাসিক সভায় সার্টিফিকেট মায়ার
বাংলা থেকে ৪২টি আসন যদি তৃণমূল জেতে, তা হলে লোকসভায় তৃণমূলই যে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হবে, তা নিশ্চিত। কারণ বিজেপি ও কংগ্রেসকে বাদ রাখলে অন্য কোনও দল অতগুলি আসনে জিততে পারবে না। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ফেডারেল ফ্রন্টের নেতৃত্ব যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ কমই।
বহরমপুরের জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসই সবাইকে নিয়ে সরকার গড়বে। উত্তরপ্রদেশ, বাংলা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে করব আমরা। কোনও অসুবিধা নেই।’’ ফারুক আবদুল্লা, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, স্ট্যালিন, দেবগৌড়া, চন্দ্রবাবু নায়ডুদের সঙ্গে যে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘সরকার গঠন করতে বিজেপি পারবে না, নিশ্চিন্ত থাকুন। আঞ্চলিক দলগুলো মিলেমিশে সরকার গড়বে।’’ আর তেমন কোনও সরকার গঠিত হলে তৃণমূল যে তার নেতৃত্ব গ্রহণে প্রস্তুত, সে কথাও স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।