kashmir

উদ্বেগ আছে, উল্লাসও আছে কাশ্মীরে

প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে তালিবান নেতারা কাশ্মীরের বিষয়ে যে অবস্থান ঘোষণা করেছেন, তা যদি তাঁরা মেনে চলেন— তবে তেমন কিছু আশঙ্কার কারণ নেই।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩৫
Share:

ছবি পিটিআই।

আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলের প্রভাব ভারতে কেমন পড়বে, এই প্রশ্নের জবাবে অবধারিত ভাবে উঠে আসছে কাশ্মীরের উল্লেখ। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষ কী ভাবে দেখছেন বিষয়টিকে? এক কথায় জবাব দেওয়া বেশ কঠিন। তবে দেশের বাকি অংশের মতো অধুনা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারাও কৌতূহল নিয়ে আফগানিস্তানের প্রতিটি ঘটনায় নজর রাখছেন। সোশ্যাল সাইটগুলি ভরে যাচ্ছে নানা মন্তব্যে। তাতে যেমন উল্লাস আছে, আছে ফের রক্তপাতের উদ্বেগও। অনেকের আশঙ্কা, এখন না হলেও কয়েক মাস পরে ভূস্বর্গে ফের সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। হিংসা, হানাহানি, রক্তপাতে তার মাসুল গুনতে হবে ইতিমধ্যেই অতিষ্ঠ-প্রাণ কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, কাশ্মীর নিয়ে খুব একটা গা করবে না তালিবান। প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে তালিবান নেতারা কাশ্মীরের বিষয়ে যে অবস্থান ঘোষণা করেছেন, তা যদি তাঁরা মেনে চলেন— তবে তেমন কিছু আশঙ্কার কারণ নেই।

Advertisement

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিজি কূলদীপ খোড়া অবশ্য জানাচ্ছেন— তালিবানের কাবুল দখলে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মাথাব্যথা বেড়ে গেল ভারতের। এত দিন নিয়ন্ত্রণ রেখা ও পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চলত। এখন নতুন ফ্রন্ট খুলে গেল— পূর্ব লাদাখ। তাঁর কথায়, “কয়েক মাস পর থেকেই এই দুই ফ্রন্টে নিরন্তর ব্যস্ত থাকতে হবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে। কাবুলে থিতু হতে কয়েক মাস সময় নেবে তালিবান। ইতিমধ্যে নভেম্বর থেকে গিরিপথগুলো বরফ পড়ে অগম্য হয়ে উঠবে। বলা যায়, পরের বছর থেকে তালিবান কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা শুরু করবে।” তবে সেই চেষ্টা যে খুব সহজ হবে, মনে করছেন না বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসার খোড়া। কারণ, সীমান্তে পাহারা আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি কড়া। রক্ষীদের হাতে রয়েছে দিনরাত নজরদারির অত্যাধুনিক শস্ত্র।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কর্মরত প্রবীণ এক কাশ্মীরি সাংবাদিক আবার তালিবানের কাবুল দখলে বিচলিত নন। তাঁর কথায়, “নব্বইয়ের আর আজকের তালিবানকে এক করে দেখলে হবে না। এই তালিবান ভারতকে কথা দিয়েছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাস আমদানির কাজ তারা করবে না। তা ছাড়া দেখুন, নিয়ন্ত্রণ রেখায় ১৪০ দিন কোনও গোলাগুলি চলেনি। এর অর্থ পরিষ্কার— ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পর্দার পিছনে কোনও কথাবার্তা নিশ্চয়ই শুরু হয়েছে।”

Advertisement

কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান নুর আহমেদ বাবার ধারণা, আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখল কাশ্মীরের জঙ্গি-জেহাদি শক্তিকে উৎসাহিত করলেও তাতে খুব বড় সমস্যা তৈরি হবে না। কারণ ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী এখন কাশ্মীরে অনেক সতর্ক। অধ্যাপক বাবা বলেন, “আমার আশঙ্কা দীর্ঘমেয়াদি। ১৯৯৯ সালে তালিবান সরকার যেমন ছিনতাই হওয়া কাঠমান্ডু-দিল্লি বিমান কন্দহরে নামিয়ে কাশ্মীরের জঙ্গি নেতাদের মুক্ত করিয়েছিল, আজ না-হলেও ক’দিন পরে তেমন একটা কিছু হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছি না। আপাতত ভারতকে তাদের পাশে চাইছে তালিবান। উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো শেষ করার জন্য তারা আর্জিও জানিয়েছে। কিন্তু এখন যা-ই বলুক তারা, কাশ্মীর থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে পারবে না তালিবান।”

ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য সাদিক ওয়াহিদ বলেন, “তালিবান সরকার যে উপমহাদেশের ভারত-বিরোধী জঙ্গি শক্তিগুলোর অবাধ আশ্রয়স্থলে পরিণত হবে না, এ কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর সেটা হলেই কাশ্মীর ফের অশাম্ত হয়ে উঠবে। আগের বার তারা জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-এ তইবা-র মতো কাশ্মীরি জঙ্গিদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে ভারতকে চাপে রেখেছিল। তালিবানের সঙ্গে কাজ করার যে আকাঙ্ক্ষা চিন দেখিয়েছে, তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।” আপাতত আফগানিস্তান নিয়ে তালিবান ও পাকিস্তান জেরবার হয়ে থাকবে বলে মত অধ্যাপক ওয়াহিদের। তাঁর কথায়, পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে আফগান শরণার্থীর ঢল নামল বলে।

তালিবানের কাবুল দখলে উৎসাহের অভিব্যক্তি কম নেই বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। আইনের ছাত্র ইমরান মজিদ যেমন মনে করছেন, বিষয়টি ইতিবাচক। তাঁর কথায়, “৩৩ বছর ধরে কাশ্মীরের মানুষ ব্যতিব্যস্ত। তিনটি প্রজন্ম শেষ হয়ে গিয়েছে। অপেক্ষা করছি, কোনও শক্তি এসে আমাদের এই চক্র থেকে মুক্ত করুক। তালিবানের কাবুল দখল আমাদের পক্ষে সুলক্ষণ! আবার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাহিস্তা মজিদ মনে করেন, আফগানিস্তানে পালা বদল ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করবে। তাঁর কথায়, “তবে সাধারণ কাশ্মীরিদের কথা কেউই বলে না। ভূস্বর্গে তাঁদের নারকীয় জীবনযাপন বদলানোর ইঙ্গিতটুকুও নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement