আদিবাসীদের তৈরি মারুয়া কেক।— নিজস্ব চিত্র।
দেখতে চকোলেট কেকের মতোই। কিন্তু কামড় দিলেই বোঝা যেতো এই কেকের স্বাদ চকোলেট কেকের থেকে আলাদা। বড়দিনের উৎসবে ঝাড়খণ্ডে এই ভিন্ন স্বাদের কালো রংয়ের কেকই এক সময় ছিল ‘হটকেক’। বাজারে বিক্রি হত চুটিয়ে। দিন বদলেছে। নামী সংস্থার কেক-পেস্ট্রির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যুঝে উঠতে না পেরে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই কেক।
নাম মাড়ুয়া কেক। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের হাতে বানানো মাড়ুয়া কেক বছর দশেক আগেও বড়দিনের উৎসবে বাজারে মিলত। এখন বাজার থেকে পুরোপুরি অদৃশ্য এই কেক।
ধান বা গমের মতোই মাড়ুয়া এক ধরনের ফসল। আদিবাসীরা মাড়ুয়ার তৈরি রুটি খেতেন। বড়দিনের সময় আদিবাসীদের ঘরে ঘরে তৈরি হতো মাড়ুয়া কেক। আদিবাসীদের মধ্যেই নয়, এই কেক বড়দিনের বাজারে সকলের কাছেই সমান জনপ্রিয় ছিল। স্বাদই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর ছিল মাড়ুয়া কেক। রাঁচির বিরসা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন রাঘব ঠাকুর বলেন, ‘‘মাড়ুয়া খরিফ ফসল। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও আয়রন। গ্রামের দিকে অধিকাংশ গরিব আদিবাসীদের শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে। ফলে এই কেক ওদের কাছে পুষ্টিকরও। পুষ্টির কথা বিবেচনা করে আমরা ফের মাড়ুয়া চাষে গুরুত্ব দিচ্ছি। ঝাড়খণ্ডের জমি মাড়ুয়া চাষের জন্য উপযুক্ত। আমাদের হোম সায়েন্স বিভাগে মাড়ুয়া কেক তৈরিও করা শুরু হচ্ছে।’’
সমাজকর্মী বাসবী কিরোর প্রশ্ন, ‘‘এই কেক কেন শুধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত সংখ্যক উৎপাদনে সীমাবদ্ধ থাকবে? কেন সরকার মাড়ুয়া চাষে গুরুত্ব দেবে না?’’ বাসবীদেবী ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘বড়দিনের উৎসবের বাজার থেকে মাড়ুয়া কেকের হারিয়ে যাওয়া দুঃখজনক। এই কেক বানিয়ে অনেক আদিবাসী উপার্জনও করতেন। রাঁচি থেকে শুরু করে জেলা শহরগুলির বাজারেও এই মাড়ুয়া কেক পাওয়া যেত।’’ মাড়ুয়া কেকের পুষ্টিগুণ নিয়ে রাঘববাবুর সঙ্গে একমত বাসবীদেবীও। তিনি জানান, ঝাড়খণ্ডের ৭৮ শতাংশ আদিবাসী অপুষ্টি, অ্যানিমিয়া ও ম্যালেরিয়ার মতো অসুখে ভোগেন। ক্যালসিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ মাড়ুয়া কেক বড়দিনের উৎসবে ওদের কাছে ছিল স্বাদ ও পুষ্টির ককটেল।