লকডাউনে স্তব্ধ কলকাতা। ছবি: পিটিআই
লকডাউন কার্যকরী করার ক্ষেত্রে কলকাতাই দেশের সব বড় শহরগুলোর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে। দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো শহর কলকাতার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। বরং জয়পুর, কোয়েম্বত্তূর, চেন্নাই ও নাগপুরের মতো শহর কিছুটা হলেও কলকাতার কাছাকাছি রয়েছে। ‘টিআরএ’ নামের একটি সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
ওই সংস্থাটি দেশের ১৬টি শহরে গত ১০ থেকে ২২ এপ্রিল লকডাউন চলাকালীন একটি সমীক্ষা করে। লকডাউনের সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করা এবং তার কারণে যে ফল পাওয়া গিয়েছে— এই দু’টি ক্ষেত্রকে ধরতেই ওই সমীক্ষা (করোনাভাইরাস কনজিউমার ইনসাইটস ২০২০) চালানো হয়েছিল। ওই সমীক্ষার রিপোর্টে লকডাউনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার ক্ষেত্রে কলকাতার নাম একেবারে প্রথমেই রয়েছে। তবে ওই লকডাউন কার্যকরী করার পর যে ফল হাতেনাতে পাওয়া গিয়েছে, তাতে কিন্তু কলকাতা রয়েছে ছয় নম্বরে।
টিআরএ-র করা প্রাথমিক ওই সমীক্ষাটি ১৬টি শহরের ৯০২ জনের মধ্যে ১০ দিন ধরে চালানো হয়েছিল। লকডাউনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার পর ওই ১৬টি শহরে গড়ে ৯১ শতাংশ ফল পাওয়া গিয়েছে। তাঁর মধ্যে ৯৮ শতাংশের উপরে রয়েছে পাঁচটি শহর। সমীক্ষায় সেই কোয়েম্বত্তূর (১০০%), কোচি (১০০%), পুণে (১০০%), লখনউ (৯৯%) এবং মুম্বই (৯৮%) ‘দারুণ ভাল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কলকাতা ৯৫ শতাংশ পেয়ে ‘খুব ভাল’ হয়ে রয়েছে ৬ নম্বরে। তার পরেই রয়েছে আমদাবাদ (৯৪%) এবং হায়দরাবাদ (৯১%)। কিন্তু লকডাউনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার ক্ষেত্রে কলকাতা ১ নম্বরে রয়েছে। ওই ১৬টি শহরকে ধরে গোটা দেশের গড় যখন ৭৪ শতাংশ, কলকাতা তখন ৮৫ শতাংশ পেয়েছে। তার ঠিক পরেই রয়েছে ৮৩ শতাংশ পেয়ে রয়েছে কোয়েম্বত্তূর এবং জয়পুর।
আরও পড়ুন: দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছুঁইছুঁই, করোনায় মৃত্যু বেড়ে ৮৭২
করোনা আবহে কতটা সচেতন দেশের বিভিন্ন শহর? সেই ছবিও উঠে এসেছে টিআরএ-র সমীক্ষায়। আপনি কতটা সচেতন— এই প্রশ্নের তিনটি জবাব ছিল সমীক্ষাপত্রে। প্রথমটি, ‘পুরোপুরি জানি’, দ্বিতীয়টি, ‘কিছুটা জানি’ এবং সর্ব শেষ জবাব, ‘কিছুই জানি না’। এর মধ্যে প্রথম দু’টি জবাবকেই সচেতনার ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত হিসাবে ওই সমীক্ষায় ধরা হয়েছিল। ‘পুরোপুরি জানি’ এই জবাবের ক্ষেত্রে ১৬টি শহরেই গড় দাঁড়িয়েছে ৭৭ শতাংশ। এই ক্ষেত্রে কলকাতা পেয়েছে ৮৬ শতাংশ। গুয়াহাটির ৯৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন করোনা নিয়ে তাঁরা পুরোপুরি সচেতন।
করোনা নিয়ে ভয়-আশঙ্কা কতটা? ৭৪ শতাংশ মানুষ নিজের পরিবার নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ৬৮ শতাংশের মুখে উঠে এসেছে চাকরি ও ব্যবসায় ক্ষতির কথা। দেরিতে বেতন পেতে পারেন, এমন আশঙ্কার কথাও বলেছেন ৬২ শতাংশ। পরিবার নিয়ে উদ্বেগের সূচকে ৮৫ শতাংশ পেয়ে সর্বোচ্চে রয়েছে লখনউ। এ ক্ষেত্রে কলকাতার ৬৩ শতাংশ উদ্বেগে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পরিকাঠামোর দিক থেকে করোনার বিরুদ্ধে ভারত কতটা লড়াই দিতে পারবে? সমীক্ষায় ৭৩ শতাংশ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়েছেন। দেশের ১৬টি শহরের মধ্যে এ ক্ষেত্রে নাগপুর সর্বাগ্রে। এমন সঙ্কটকালে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর ভরসা রেখেছেন ৬৩ শতাংশ মানুষ। দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক দু’টি পরিকাঠামোর উপরেই ভরসা রেখেছে মহারাষ্ট্রের তিন শহর— মুম্বই, নাগপুর ও পুণে (৭৪%)। সেখানে উত্তর-পূর্ব ভরসা রাখছে ৬২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ভরসা দিচ্ছে প্লাজ়মা চিকিৎসা, দেশে নয়া আক্রান্ত আরও ১৩৯৬
সমীক্ষায় উঠে এসেছে অন্য একটি ছবিও। বড়রা লকডাউনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও, এই পরিবেশের সঙ্গে মোটেই খাপ খাইয়ে উঠতে পারছে না শিশুরা। এ ক্ষেত্রে দিল্লি ও চণ্ডীগড়ের শিশুরা সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গোটা দেশের হিসেবে গড়ে ২৫ শতাংশের কাছাকাছি শিশু বলেছে তাদের ঠিকঠাক লাগছে। বাকি ৭৫ শতাংশ কিন্তু ভাল নেই বলেই জানিয়েছে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্যের অভাবের কথাও উঠে এসেছে। সংস্থার সিইও এন চন্দ্রমৌলি বলছেন, ‘‘২১ থেকে ২৪ এবং ৪৬ থেকে ৫০ বছরের মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে তথ্য ও জ্ঞানের বিপুল অভাব রয়েছে।’’ সংস্থাটির মতে, দিল্লি ও চণ্ডীগড়ে করোনা নিয়ে ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি। রোগটির উপসর্গ নিয়ে দিল্লি ও মুম্বইয়ে সচেতনতাও বেশি। সমীক্ষার সময় গ্রাহকদের মানসিকতা, সামাজিক অবস্থানের দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছিল বলে টিআরএ-র তরফে জানানো হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)