RSS

বিজেপির কাজে ‘হস্তক্ষেপ’ নয় সঙ্ঘের, সিদ্ধান্ত কেরলে

বাংলার পাশাপাশি কেরলেও এ বার বিধানসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। বাংলায় তারা প্রধান বিরোধী দল হলেও কেরলে কোনও আসনই জিততে পারেনি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৬:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে সামনে থাকে বিজেপি, তার মূল চালিকা শক্তি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। এই পদ্ধতিতেই গেরুয়া শিবির কাজ করে আসছে বহু বছর ধরে। এ বার কেরলে নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে বিজেপির দৈনন্দিন রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও সাংগঠনিক বিষয় থেকে আপাতত দূরত্ব রাখার সিদ্ধান্ত নিল আরএসএস। গেরুয়া রাজনীতিতে এমন ঘটনা বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

Advertisement

বাংলার পাশাপাশি কেরলেও এ বার বিধানসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। বাংলায় তারা প্রধান বিরোধী দল হলেও কেরলে কোনও আসনই জিততে পারেনি। এক কথায়, দুই রাজ্যেই ভোটের প্রবণতা ছিল বিজেপি-বিরোধী। এমন বিপর্যয়ের পরে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্বের মতের ফারাক স্পষ্ট হতে শুরু করে। বাংলায় যেমন অন্য দল ভাঙিয়ে বেনো জল ঢুকিয়ে বিজেপি ভুল করেছে বলে মত দিয়েছে সঙ্ঘ। তেমনই কেরলে আবার বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁদের দলের সব ব্যাপারে সঙ্ঘের ‘অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ’ মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে। তার মাসুল দিতে হয়েছে ভোটের ফলে। এই প্রেক্ষিতেই দক্ষিণী ওই রাজ্যের সঙ্ঘ এবং বিজেপি নেতৃত্ব আলোচনায় বসে আপাতত রোজকার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যকলাপে দূরত্ব রেখে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সূত্রের খবর, দু’দিন আগে কোচিতে সমন্বয় বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি এবং আরএসএসের রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব। সঙ্ঘর তরফে প্রান্ত কার্যবাহ পি এন ঈশ্বরন, প্রান্ত সঙ্ঘচালক কে কে বলরাম, প্রান্ত প্রচারক হরিকৃষ্ণন প্রমুখ বৈঠকে ছিলেন। বিজেপির তরফে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি মুরলীধরন, প্রাক্তন রাজ্যপাল ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি কুম্মানাম রাজশেখরন এবং অন্যেরা। সেই বৈঠকে রাজ্যে বিজেপির ‘পূর্ণ রাজনীতিকরণের’ পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলীধরন। তাঁর মতে, শুধু নির্দিষ্ট একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক লক্ষ্যে দল পরিচালিত হলে কেরলের মতো রাজ্যে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। সাংগঠনিক ভাবেও নিচু তলায় বিজেপির বহু কর্মী একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করলেও নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে সঙ্ঘ থেকে আসা লোকেদের হাতে। মণ্ডল ও জেলা সভাপতিদের বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়াও সংগঠনে সমস্যা তৈরি করছে। এই ‘অচলাবস্থা’ কাটানো দরকার। মুরলীধরনকে সমর্থন করেন আরও কিছু বিজেপি নেতা।

Advertisement

সঙ্ঘের নেতৃত্ব অবশ্য পাল্টা যুক্তি দেন, যে কাজ বিজেপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ভাবে করার কথা, তারা অনেক সময়েই তা ঠিকমতো করে না এবং সেই কারণেই সঙ্ঘকে বাড়তি ভূমিকা নিতে হয়। এর মধ্যে ‘হস্তক্ষেপের’ কোনও ব্যাপার নেই। তা ছাড়া, ভারতে আর কোনও রাজনৈতিক দলেরই এমন ‘অভিভাবকত্ব’ পাওয়ার সুবিধা নেই! তবে রাজ্যে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে লাগাতার বিপর্যয়ের পরে বিজেপি নেতৃত্ব যে হেতু সমস্যার অভিযোগ করছেন, সে কথা বিবেচনা করে আপাতত দলের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে নিজেদের কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন সঙ্ঘচালকেরা। গোটা বিষয়টি নিয়ে পরে কেন্দ্রীয় স্তরেও বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে বিশদে আলোচনা হবে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন তাঁরা। আর বিজেপি নেতারা তাঁদের বলেছেন, আদর্শগত বিষয়ে দলকে পথ দেখানোর কাজ করে চলুক সঙ্ঘ। সংগঠন কিছু দিন বিজেপির হাতেই মূলত থাকুক।

কেরল বিজেপির এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘সঙ্ঘ-বিজেপির মধ্যে বিরোধ কিছু নেই। তবে কাজ করতে গিয়ে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, সমন্বয় বৈঠকে তার পর্যালোচনা হয়েছে। আপাতত সাংগঠনিক এবং সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি দল তার মতো চালাবে। পরে আবার পর্যালোচনা হবে।’’ এই আপাত-ব্যবস্থার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে কি না, রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা সেই প্রশ্নেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement