‘জেলা সুশাসন সূচক’ প্রকাশের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অমিত শাহ। শনিবার। ছবি— পিটিআই।
জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরেই ভোট করা হবে বলে ফের আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রাজ্যের মর্যাদাও ফেরানো হবে বলে জানিয়েছেন শাহ। ফলে ফের প্রশ্ন উঠেছে, সন্ত্রাসমুক্ত ‘নয়া কাশ্মীর’-এর স্বপ্ন এখনও যে পূরণ হয়নি তা কি কার্যত স্বীকার করলেন শাহ? বিষয়টি নিয়ে শাহকে নিশানা করেছেন কাশ্মীরের নেতারা।
আজ ভারতের প্রথম ‘জেলা সুশাসন সূচক’ প্রকাশ করেন শাহ। সেই উপলক্ষে হওয়া ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অগ্রাধিকারের তালিকায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে। সেখানকার উন্নয়নের জন্য নানা স্তরে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। সে কাজ শেষ হলেই বিধানসভা ভোট করা হবে। অনেকে অনেক কিছু বলছেন। কিন্তু আমি সংসদে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সে কাজ করব আমরা।’’ শাহের বক্তব্য, ‘‘কেবল গণতন্ত্রের মাধ্যমেই জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন সম্ভব। পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে গণতন্ত্র সেখানে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। তার ফলেই কিছু লোক ঘাবড়ে গিয়েছেন।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, গণতন্ত্রের জন্য জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি প্রয়োজন। কায়েমি স্বার্থের প্ররোচনায় অশান্তির পথে পা না বাড়ানোর জন্য জম্মু-কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের অনুরোধ করেছেন তিনি। আস্থা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপরে।
শাহের দাবি, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যে বলা হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের আমার অনুরোধ, যারা মিথ্যে ছড়াচ্ছে তাদের কয়েকটি প্রশ্ন করুন। প্রথমত বলা হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের জমি কেড়ে নেওয়া হবে। জানতে চান কার জমি কাড়া হয়েছে? বলা হয়েছিল, হিংসা বাড়বে। জানতে চান হিংসা বেড়েছে না কমেছে? বলা হয়েছিল লগ্নি আসবে না। ইতিমধ্যেই ১২ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে।’’
শাহের দাবি, বিশেষ মর্যাদা লোপের আগে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৮৭ জন বিধায়ক ও ৬ জন সাংসদ নির্বাচিত হতেন। মূলত তিনটি পরিবার জম্মু-কাশ্মীর শাসন করত। এখন ৩০ হাজার পঞ্চায়েত সদস্য জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জন্য কাজ করছেন।
কিন্তু কাশ্মীরের নেতাদের প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকত্বের সংজ্ঞা কি? কাশ্মীর স্বাভাবিক কি না সেটা কেন্দ্র কী ভাবে বুঝবে? তাঁদের মতে, এ কথা বলে কার্যত রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোকে অনির্দিষ্ট কাল পিছিয়ে দিলেন শাহ। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির বক্তব্য, ‘‘স্বাভাবিক পরিস্থিতির নামে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সন্ত্রস্ত করে ভারত সরকার মেনে নিচ্ছে কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এটা দ্বিচারিতা। এ থেকে আরও বোঝা যায় নৈঃশব্দকে স্বাভাবিকত্ব বলে ধরে নেওয়া যায় না।’’ পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোনের বক্তব্য, ‘‘স্বাভাবিকত্বের সংজ্ঞা কী? আর যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কি স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই বলে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া যায়?’’ গুপকর জোট ও সিপিএমের নেতা ইউসুফ তারিগামির মতে, ‘‘জেলা সুশাসন সূচক প্রকাশ করে নিজেদের প্রচার করছে সরকার। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। ভাঙা রাস্তা, জল সরবরাহে সমস্যা, বেকারত্ব থেকেই কাশ্মীরের সুশাসনের চিত্র বোঝা যাচ্ছে।’’