—প্রতীকী ছবি।
বছর চল্লিশের লোকটির সঙ্গে এক মহিলাকে হোটেলে ঢুকতে দেখেছিলেন জনৈক অটোচালক। মহিলার পোশাক দেখেই বুঝেছিলেন, তাঁর এবং সঙ্গী পুরুষটির ধর্ম আলাদা। অটোচালকের মুখে খবর পেয়ে তিনটি মোটরবাইকে ছ’জন যুবক এসে চড়াও হয় হোটেলের সেই ঘরে, যেখানে উঠেছিলেন ওই যুগল। ঘরের দরজা খোলা মাত্রই শুরু হয় মার। বছর ছাব্বিশের মহিলাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। গোটা পর্বেরই ভিডিয়ো করা হয়েছিল, যা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। গত ৮ জানুয়ারি দুপুর ১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছিল কর্নাটকের হাভেরি জেলার হানাগল তালুকে। নীতি-পুলিশগিরি করা ওই ছয় যুবকের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক জন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি তিন জনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিগৃহীত ব্যক্তি কর্নাটকের সরকারি বাসের চালক। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিবাহিতা মহিলাটির সঙ্গে বছর তিনেক ধরে সম্পর্কে রয়েছেন তিনি। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, দরজায় ধাক্কা দিয়ে ওই ছ’জন হোটেলের ঘরে ঢুকে পড়ে বাসচালক ও তাঁর সঙ্গিনীকে মারধর শুরু করে। মুখ আড়াল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তরুণী। তাঁদের কটূক্তি করতে করতে নিগ্রহকারীরা এই সময়ে জানতে চাইছিল, কেন তাঁরা এক ঘরে এসে উঠেছেন? পুলিশ জানিয়েছে, এর পরে ওই যুগলকে হোটেল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তুলে নিয়ে যায় তারা। সেখানে ফের মারধর চলে। তরুণীকে লাঠিপেটাও করা হয়। তার পরে তাঁর হাতে পাঁচশো টাকা দিয়ে বলা হয় সিরসিতে নিজের বাড়ি চলে যেতে। সেখানেই মহিলার স্বামী থাকেন। তাঁদের একটি সাত বছরের মেয়ে আছে। নিগ্রহকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালায়। এক দিন পরে বিষয়টি জানাজানি হতে পুলিশ প্রথমে ওই যুগলকে খুঁজে বার করে। অভিযোগের ভিত্তিতে, গ্রেফতার করা হয় দুই নিগ্রহকারীকে।
তরুণীর স্বামীর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণও করা হয়েছে। তবে লিখিত ভাবে এই অভিযোগ করেননি তিনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মহিলার সম্মানহানি, অনধিকার প্রবেশ, অপহরণ-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা কোনও বিশেষ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের কোনও পুরনো অপরাধের রেকর্ডও এখনও পর্যন্ত মেলেনি। এক অফিসার বলেন, ‘‘ওই দলের দু’জনকে আমরা ধরেছি। আর এক জন ওই ঘটনার পরের দিনই এক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ছাড়া পাওয়া মাত্র তাকেও হেফাজতে নেওয়া হবে। অন্য তিন জনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’’
গত শনিবার কর্নাটকেরই বেলগাভিতে প্রেমিক-প্রেমিকা সন্দেহে ভিন্নধর্মী দুই যুবক-যুবতীকে মারধর করা হয়। তাঁরা মাসতুতো ভাইবোন। মেয়েটির মা হিন্দু, বাবা মুসলিম। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ন’জন।