ছবি: পিটিআই।
কিছুটা নজিরবিহীন ভাবেই আজ একসঙ্গে আটটি বিল লোকসভায় পেশ করল সরকার। আর অধিকাংশ বিলের বিরোধিতায় সরব হলেন বিরোধীরা।
বিরোধীদের বক্তব্য, আজ এমন তিনটি বিল রয়েছে যে সেগুলি আইন হলে আমজনতার উপরে সরকারের নজরদারির ফাঁস আরও বাড়বে। সরকার-বিরোধিতা রোধ করতেই বিলগুলি আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের পাল্টা দাবি, সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যেই ওই সংশোধন।
আজ প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই প্রথমে ডিএনএ প্রযুক্তি বিলটি লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। ধর্ষণ, খুন, মানবপাচারে অভিযুক্ত, নিখোঁজ বা মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানার উদ্দেশ্যেই বিলটি আনা হয়েছে বলে জানান হর্ষ। আরও যুক্তি, কেদারনাথে ধসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনায় যেখানে প্রচুর লোকের মৃত্যু ঘটে, সেখানে তাদের পরিচয় বার করতে ডিএনএ নমুনা কাজে লাগবে। তথ্য জমা থাকবে জাতীয় ও আঞ্চলিক তথ্য ব্যাঙ্কে। তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের মতে, সরকারকে বুঝতে হবে, সন্দেহভাজন মানেই অপরাধী নয়। কোনও সন্দেহভাজন নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাঁর তথ্য কী ভাবে নষ্ট করা হবে, তার কোনও উল্লেখ নেই বিলে। তথ্য সুরক্ষা আইন না থাকায় তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায় বলে সরব হন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।
বিলে বিতর্ক
ডিএনএ টেকনোলজি বিল
• ডিএনএ নমুনা নিয়ে অপরাধী, সন্দেহভাজন, নির্যাতিত, নিখোঁজ, অজ্ঞাতপরিচয়ের পরিচয় নির্ধারণ
বিরোধী বক্তব্য
• তথ্য সুরক্ষা আইন না থাকায় ডিএনএ তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা
• বিচারাধীন বা সন্দেহভাজন মানেই দোষী নয়। তাই শাস্তি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ না করার আর্জি
ইউএপিএ সংশোধনী বিল
• ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করা যাবে
বিরোধী বক্তব্য
• সরকার-বিরোধী হলেই সন্ত্রাসবাদী হিসেবে
দাগিয়ে দেওয়া হবে
এনআইএ সংশোধনী বিল
• বিদেশের মাটিতে মূলত সন্ত্রাসের ঘটনায় ভারতীয়ের মৃত্যু বা দেশীয় সম্পত্তির ক্ষতি হলে তদন্তের অধিকার। মানবপাচার ও সাইবার অপরাধ রুখতে সংস্থাকে বিশেষ ক্ষমতা
বিরোধী বক্তব্য
• এনআইএকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে নিয়ে আসার দিশা নেই
মানবাধিকার রক্ষা সংশোধনী বিল
• জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। নতুন আইনে তিনি বা সুপ্রিম কোর্টের অন্য কোনও বিচারপতি চেয়ারপার্সন হতে পারবেন
বিরোধী বক্তব্য
• প্রধান বিচারপতির উপস্থিতি আবশ্যিক না করে কমিশনকে দুর্বল করার চেষ্টা
উপভোক্তা সংরক্ষণ বিল
• স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয় বাদ সংশোধিত বিলে
বিরোধী বক্তব্য
• স্বাস্থ্য পরিষেবায় মীমাংসার জন্য কোথায় দ্বারস্থ হতে হবে, তার দিশা কোথায়
জালিয়ানওয়ালা বাগ রাষ্ট্রীয় স্মারক সংশোধনী বিল
• জালিয়ানওয়ালা বাগ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেস সভাপতিকে সদস্য হিসেবে সরিয়ে দেওয়া হবে
বিরোধী বক্তব্য
• কংগ্রেস না থাকলে জালিয়ানওয়ালা বাগ মেমোরিয়াল গঠন হত না
• মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচিত সদস্যকে সরিয়ে দিতে পারে সরকার
সরকার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) বিল ও বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) বিলে সংশোধনী আনায় ওই আইনগুলির অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা। সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, এনআইএ আদালতে মামলার চাপ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আদালতেও বিচারের জন্য দ্বারস্থ হতে পারবে এনআইএ। কংগ্রেসের শশী তারুরের কথায়, ‘‘এতে নিম্ন আদালতে আরও মামলার চাপ বাড়বে। সরকারের উচিত একাধিক ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠন করা।’’
অন্য দিকে, ইউএপিএ সংশোধনী বিল পেশ করে সরকার জানিয়েছে, আগামী দিনে সংগঠনের পাশাপাশি কোনও ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। আরএসপি সাংসদ এম কে প্রেমচন্দ্রনের মতে, ওই আইন বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারকে ছিনিয়ে নেবে। শশীর কথায়, ‘‘কোনও সংগঠনেই নেই, এমন কোনও সন্ত্রাসবাদী দেখাক সরকার।’’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডির জবাব, ‘‘অনেক জঙ্গিই একা কাজ করে। তাদের কথা ভেবেই পরিবর্তন করা হচ্ছে। আমজনতার সমস্যা হবে না।’’
বর্তমানে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে শীর্ষ আদালতের যে কোনও বিচারপতিও সেই পদে আসীন হতে পারেন। ওই পদক্ষেপ আসলে কমিশনকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা বলে সরব হন অধীর। পাল্টা যুক্তিতে রেড্ডি বলেন, ‘‘অনেক প্রধান বিচারপতি কমিশনের শীর্ষ পদে বসতে আগ্রহ দেখান না। আর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি পদমর্যাদায় সমান। রাজ্যের ক্ষেত্রেও ওই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।’’
আজ আর একটি বিল এনে জালিয়ানওয়ালা বাগ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেস সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিরোধিতায় শশী বলেন, ‘‘ব্রিটিশরা চেয়েছিল জালিয়ানওয়ালা বাগকে বাজারে পরিণত করতে। কিন্তু কংগ্রেস চাঁদা তুলে সেখানে স্মারক বসায়। এখন কংগ্রেসকে ট্রাস্ট থেকে সরিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে পাল্টাতে চাইছে সরকার।’’ উপভোক্তা সংরক্ষণ বিল থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা সরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরোধিতাতেও সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ করতে মানুষ অসুবিধায় পড়বেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।