ধৃত শিল্পপতি রাগিব আলি। বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জে। — নিজস্ব চিত্র
নিজের দেশের মাটিতে পা রাখতেই গ্রেফতার হলেন সে দেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি রাগিব আলি। বাংলাদেশে চা বাগান, হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে তাঁর। রয়েছে অসংখ্য স্কুল।
মূলত দেবোত্তর এবং হিন্দু সম্পত্তি দখল করার দায়ে সিলেটের মেট্রোপলিটন আদালত আলির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সঙ্গে সঙ্গেই রাগিব আলি ভিসা নিয়ে ভারতে চলে আসেন। করিমগঞ্জের কালীবাড়ি ঘাট পুলিশ চেকপোস্ট দিয়ে তিনি শিলচরে চলে যান। শারীরিক অসুস্থতার জন্য করিমগঞ্জ পুলিশ দু’বার তাঁর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে। ৯০ বছর বয়স্ক বাংলাদেশের এই শিল্পপতি শিলচর মেডিকেল কলেজ এবং মেঘালয়ে চিকিৎসা করান।
আগামী কাল তাঁর ভিসার বাড়তি মেয়াদও শেষ হচ্ছে। অসম পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত সঞ্চালক পল্লব ভট্টাচার্য তার আগেই এই শিল্পপতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রদীপ রঞ্জন কর রাগিব আলির সঙ্গে কথা বলেন। অন্য দিকে, পুনরায় ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের উপর চাপ আসতে থাকে। এমনকী অসমের প্রাক্তন এক মুখ্যমন্ত্রীও ফোন করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছিলেন।
কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। অসমের বহু জঙ্গিকে বাংলাদেশ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করিমগঞ্জ পুলিশ যদি পুনরায় রাগিবের ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় তাহলে সমস্যা হতে পারে। তাই কোনও রকম চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার গত কাল থেকেই রাগিব আলিকে কানিশাইলের একটি বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখেন। জানিয়ে দেন, তাঁকে যে কোনও পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হাতেই তিনি তুলে দেবেন। আজ সকালেসুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও প্রথমে তা সম্ভব হয়নি। কারণ তাঁর পাসপোর্টে জকিগঞ্জ দিয়ে যাওয়া-আসার অনুমতি ছিল। তাই তাঁকে কালীবাড়ি পাসপোর্ট চেকপোস্টে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সিলেটের পুলিশ সুপার, বিজিবির কম্যান্ড্যান্ট সুতারকান্দি সীমান্তে রাগিব আলির অপেক্ষায় ছিলেন। তাই কালীবাড়ি চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন করার পরও তাঁকে নদী পার করে পাঠানো যায়নি। পরে সুতারকান্দি দিয়েই রাগিব আলিকে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, রাগিব আলির পুত্র আব্দুল হাই একই ভাবে বরাক উপত্যকায় এসে আত্মগোপন করেছিলেন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁকেও দিন সাতেক আগে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হয়। গ্রেফতার হন তিনিও। দেবোত্তর সম্পত্তি এবং হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগে বাংলাদেশের আদালত গত ১১ অগস্ট রাগিব আলির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। বাংলাদেশের এই শিল্পপতিকে বিদায় জানাতে অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমদ, করিমগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ-সহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সীমান্তে হাজির হন।