নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, গোপনীয়তার নামে প্রধানমন্ত্রী শুধু কিছু ধনী ও শিল্পপতির সুবিধা করে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তকে বড়সড় কেলেঙ্কারি বলেও অভিহিত করেন চিদম্বরম। আবার এ দিনই ‘নোট বাতিল কেলেঙ্কারি’-র তদন্তে যৌথ সংসদীয় দলের দাবি জানিয়েছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে অরুণ জেটলি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে যেমন কালো টাকা উদ্ধার হবে, তেমনই দুর্নীতি রোধ
করা সম্ভব হবে। দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়া কংগ্রেস এটা মেনে নিতে পারছে না বলেই সরব হয়েছে।
নাগপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে চিদম্বরম বলেন, মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশে যত গরিব মানুষের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে, কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সেটা হয় না। টানা এক মাস ধরে নগদের অভাব। সব্জি মন্ডি বন্ধ। বাজারে বেচা-কেনা লাটে উঠেছে। দেশের ৪৫ কোটি গরিব মানুষের মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে দিয়েছে এই সিদ্ধান্ত, সাবেক অর্থমন্ত্রীর মতে যা শুধু অপরিকল্পিতই নয় মস্তবড় একটি কেলেঙ্কারি। তিনি বলেন, ১০০ জন অফিসার মিলে বাজেট তৈরি করেন, তাতে গোপনীয়তাও বজায় থাকে। এটা কী এমন সিদ্ধান্ত, যা নেওয়ার আগে নিজের দলের তরফে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানো যশবন্ত সিনহা বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পরামর্শও নেওয়া যায় না?
যে ভাবে ব্যবসায়ী বা হাওয়ালা চক্রের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার নতুন নোট উদ্ধার হচ্ছে, সেটাকেও নয়া কেলেঙ্কারি বলে অভিহিত করেন চিদম্বরম। তিনি বলেন, কোটি কোটি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দু’হাজার বা আড়াই হাজার টাকার বেশি তুলতে পাচ্ছেন না। কিন্তু কিছু লোকের ভাঁড়ার ভর্তি কোটি কোটি টাকার নতুন নোট। তাদের হাতে কারা কী ভাবে এত টাকার নতুন নোট পৌঁছে দিল, তার তদন্তে বিশেষ দল গঠনের দাবি জানান চিদম্বরম। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলেন, নোট বদলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মোদী দাবি করেছিলেন— এতে কালো টাকা উদ্ধার হবে। এখন আর সে কথা বলছেন না। কারণ, তাঁর কথায়— ‘‘পর্বতের মুষিক প্রসব হয়েছে!’’ তাই এখন তিনি ‘ক্যাশলেস’ সমাজের গল্প শোনাচ্ছেন। কয়েক মাসে ৩ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে পৌঁছে যাবে দেশ। চিদম্বরম বলেন, ‘‘যে দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ নেই, ওয়াইফাই নেই, ইন্টারনেট নেই, যে দেশের বড় অংশের গ্রামে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের শাখাটুকুও নেই, সে দেশে ক্যাশলেস সমাজ গড়াই বা কী করে সম্ভব?’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দাবি, মোদীও সেটা জানেন। তবুও এ কথা তাঁকে বলতে হচ্ছে। ‘‘ডিম ফাটিয়ে ওমলেট ভাজা হয়ে গেলে আর ডিমে ফেরা যায় না,’’ বলেন চিদম্বরম।
পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অস্ত্র সেই দুর্নীতির। তিনি বলেন, সরকারে থেকে একের পর এক দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি করে গিয়েছে কংগ্রেস। তাই নোট বাতিলকেও কেলেঙ্কারি বলছে তারা। ক্যাশলেস সমাজ হলে আর দুর্নীতি করা যাবে না, সেটা তারা বুঝে গিয়েছে বলেই এত সরব। অরুণ জেটলির দাবি, মানুষ কষ্ট সহ্য করে নিলেও কংগ্রেস সেটা মানতে পারছে না।