দেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও এ বার দুর্নীতির অভিয়োগ উঠল করিমগঞ্জে। করিমগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জবাইনপুরে জলসম্পদ বিভাগের বাঁধ মেরামতির নামে দু’কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, বাঁধ মেরামতির কাজ নিম্ন মানের হওয়ার ফলে সেখানে এখন কাঁটাতারের বেড়া বসানোও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সীমান্তের প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা উন্মুক্ত রয়েছে। স্থানীয় মানুষ এ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানেও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জলসম্পদ বিভাগের তিফ ইঞ্জিনিয়ার থেকে বিভাগীয় সচিব-সব পর্যায়েই অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপির মহিলা মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শিপ্রা গুণ।
গত বছর জবাইনপুর এলাকার কুশিয়ারা নদীর পাড় ভেঙে যায়। পাড় ভেঙে যাওয়ার ফলে প্রায় ৩০০ মিটার এলাকার কাঁটাতারের বেড়াও ধসে যায়। অসম সরকার বাঁধ মেরামত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠায়। সেই অনুযায়ী ২০১৫ সালে প্রায় দু’কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। বাঁধের নীচের অংশে পাথর বসিয়ে উপরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বালি ব্যবহার করতে বলা হয়। পাশাপাশি, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে পাঁচটি পুকুর রয়েছে সেগুলিও ভরাট করতে বলা হয়। কারণ কাছাকাছি জল থাকলে নদীর জল মাটির তলা দিয়ে পাশের পুকুরের দিকে যাওয়া চেষ্টা করে। তাতে বাঁধের তলদেশ দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে নদীবাঁধ বসে যাওয়া বা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ইঞ্জিনিয়ারদের ধারণা, জবাইনপুরে কুশিয়ারা নদীর পাড় ভেঙে পড়ার এটি অন্যতম একটি কারণ। কিন্তু বাঁধ মেরামতির সঙ্গে সঙ্গে পুকুরগুলি ভরাটের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, নকশা অনুযায়ী বাঁধ মেরামতি করা হয়নি। কোনও মতে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। ফলে এখন নবনির্মিত বাঁধের বিভিন্ন অংশের মাটি খসে যাচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, অল্প বৃষ্টিতেই যদি বাঁধ ধসে পড়ার উপক্রম হয়, তা হলে বর্ষা পুরোপুরি নামলে এই বাঁধ টিকবে কী করে? বাঁধ ভাঙার ভয়ে আতঙ্কিত জবাইনপুর, এলংজুরি, সরিষা এলাকার মানুষ। সীমান্তের বিএসএফ চৌকিও জলের তলায় চলে যায়। দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে জেলাশাসক অভিযোগকারীদের জানিয়ে দিয়েছেন, বাঁধের কাজ ভালই হচ্ছে। অভিযোগ খতিয়ে না দেখে, পরিস্থিতি সরেজমিনে না দেখেই জেলাশাসকের এই ‘সার্টিফিকেট’ দেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। তাদের বক্তব্য, এই বাঁধ ভাঙলে তার দেয় ওই জেলাশাসককেই নিতে হবে।