নেহরুর এই ছবিই ‘ডিপি’ করছেন কংগ্রেস নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে ফেসবুক-টুইটারের ‘প্রোফাইল পিকচার’-এ জাতীয় পতাকার ছবি দিতে বলেছিলেন। বিজেপির সকল নেতা, মন্ত্রীই নিজের মুখের বদলে তিরঙ্গার ছবি লাগিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত এখনও সে পথে হাঁটেননি। আরএসএসের নিজস্ব টুইটারের ডিপি-তেও তিরঙ্গার ছবি নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচি নিয়ে বিজেপির জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় বেলুন চুপসে দিতে কংগ্রেস অভিযোগ তুলল, সঙ্ঘ পরিবারের যে এখনও জাতীয় পতাকা নিয়ে আপত্তি রয়েছে, এটাই তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
বিজেপি নেতারা যখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে জাতীয় পতাকার ছবি দিচ্ছেন, তখন কংগ্রেস নেতারা তাঁদের প্রোফাইলে জাতীয় পতাকা হাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ছবি ঝুলিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘১৯২৯-এ কংগ্রেসের লাহৌর অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের ঘোষণা করে জওহরলাল নেহরু তিরঙ্গা উড়িয়েছিলেন। আমরা তিরঙ্গা হাতে আমাদের নেতা নেহরুর ছবি ডিপি-তে লাগাচ্ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বার্তা বোধহয় তাঁর পরিবারের কাছেই পৌঁছয়নি। যারা ৫২ বছর নাগপুরে নিজেদের সদর দফতরে জাতীয় পতাকা ওড়ায়নি, তারা কি প্রধানমন্ত্রীর কথা মানবেন?’’
স্বাধীনতা দিবসের আগে মোদী ‘হর ঘর তিরঙ্গা’-র কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি ‘হর ঘর তিরঙ্গা’-র নামে জাতীয় পতাকা বিধি বদলে খাদির সঙ্গে পলিয়েস্টারের তৈরি জাতীয় পতাকার অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে খাদি সংস্থা, খাদির পতাকা প্রস্তুতকারক স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি মার খাবে। চিনের তৈরি ভারতের জাতীয় পতাকায় বাজার ছেয়ে যাবে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ কর্নাটকের হুবলিতে খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সঙ্ঘের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন। এই সংস্থাই খাদির জাতীয় পতাকা তৈরি করত। এখন কর্মীরা কেন্দ্রের পলিয়েস্টারের পতাকা তৈরির অনুমতির বিরোধিতা করছে। রাহুল বলেন, ‘‘শুধু নিজের প্রচারে ডুবে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, ৫২ বছর ধরে আরএসএস নিজেদের সদর দফতরে কেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি? খাদি থেকে জাতীয় পতাকা তৈরির জীবিকাকে কেন নষ্ট করা হচ্ছে? চিনের যন্ত্রে তৈরি, পলিয়েস্টারের পতাকার আমদানির অনুমতি কেন দেওয়া হল?’’
আজ মোদীর ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক লাল কেল্লা থেকে সংসদ পর্যন্ত তিরঙ্গা বাইক যাত্রার আয়োজন করেছিল। উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু যাত্রার সূচনা করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি স্কুটিতে চেপে যাত্রায় অংশ নেন। বিজেপির মনোজ তিওয়ারির মতো নেতারা সংসদ চত্বরে জাতীয় পতাকা ওড়ান। কিন্তু বিরোধীদের কেউ ওই কর্মসূচিতে যোগ দেননি। বিজেপি নেতারা এই নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের তোপ দেগেছে। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি সরকারের তিরঙ্গা কর্মসূচিকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে কোনও সমস্যা নেই। সরকারি অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করা হলে তাতেই সমস্যা।’