বিরোধের মুখে লোকসভা ভোটের আগে সংসদের শেষ অধিবেশনেও তিন তালাক, নাগরিকত্বের মতো বিল রাজ্যসভায় পাশ করাতে পারেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। লোকসভা ভোটে তিনশো পার করে ক্ষমতায় ফিরলেও দূর হয়নি রাজ্যসভার কাঁটা। এই অবস্থায় উচ্চকক্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের জন্য জোড়াতালি দিয়ে সংখ্যা জোগাড়ে এখন মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। বাজেটের পরে ‘বন্ধু’ দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বৈতরণী পার করা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
দু’দিন আগে রাজ্যসভায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুটা হুমকির সুরেই বলে এসেছেন, লোকসভার জনমত রাজ্যসভাকেও মানতে হবে। উচ্চকক্ষে সংখ্যা শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে না থাকলেও মানুষ সরকারের উপর যে ভরসা রেখেছে, সেই প্রত্যাশা মেটানোর জন্য রাজ্যসভাকেও এগিয়ে আসতে হবে। যা শুনে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, রাজ্যসভা কোনও ভাবে ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হতে পারে না। এখন বিজেপি নেতৃত্ব হিসেব দিচ্ছেন, রাজ্যসভার কাঁটা অনেকটাই দূরকরা গেছে। জুলাই মাসে বাজেট পেশের পরে পরিস্থিতি অনেকটাই ‘অনুকূল’ হবে।
বিজেপি নেতাদের অঙ্ক, ২৪৫ আসনের রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২৩ জনের সমর্থন। যদি কোনও বিল পাশের সময় সকলেই উপস্থিত থাকেন। এই মুহূর্তে বিজেপির একক ভাবে রয়েছে ৭৫ জন সাংসদ, কংগ্রেসের ৪৮। বিজেপির এই ৭৫-এর মধ্যে চন্দ্রবাবু নায়ডুর দলের ৪ এবং আইএনএলডি-র ১ জনও রয়েছেন, যাঁদের সম্প্রতি বিজেপিতে আনা হয়েছে।
আসন-অঙ্ক
• রাজ্যসভায়
মোট আসন ২৪৫
• সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১২৩
• বর্তমানে এনডিএ ১১১
আরও আসবে
• বিজেপি ৩
• এলজেপি ১
মোট ১১৫
এনডিএর বাইরে যাদের পাওয়ার আশা
• বিজেডি ৫
• টিআরএস ৬
• ওয়াইএসআরসিপি ২
• এনপিএফ ১
মোট ১৪
বিজেপির সংখ্যাটি আরও একটি বাড়ত, কিন্তু মাত্র চার দিন আগেই রাজস্থানের সাংসদ মদনলাল সাইনির মৃত্যুতে তা হয়নি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে গুজরাত থেকে আরও দু’জন জিতে আসবেন। যার মধ্যে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর রয়েছেন। ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে রফা করে আরও এক জন বাড়তি সাংসদ বিজেপির ঝুলিতে আসবে। ফলে জুলাইয়ের গোড়ায় বিজেপির সদস্য হবেন ৭৮ জন।
পাশাপাশি এডিএমকে-র ১৩, জেডিইউ-র ৬, শিবসেনার ৩, অকালির ৩-সহ শরিক জোটে আছেন ২৯ জন। জুলাই মাসে জিতে আসছেন খোদ রামবিলাস পাসোয়ান। সব মিলিয়ে ৩০। এর সঙ্গেই অমর সিংহ, সুভাষ চন্দ্র, পরিমল নাথওয়ানি, সঞ্জয় দত্তাত্রেয়র মতো চার নির্দল এবং স্বপন দাশগুপ্ত, মেরি কম, নরেন্দ্র যাদবের মতো তিন জন মনোনীত সাংসদ রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, কেরলের বীরেন্দ্র কুমারও নির্দল সাংসদ হিসেবে রয়েছেন। তবে তাঁরা শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে থাকবেন না। ফলে বাকিদের নিয়ে শাসক গোষ্ঠীর সংখ্যাটি টেনেটুনে ১১৫-তে পৌঁছচ্ছে। যে কারণে সংসদের চলতি অধিবেশনে রাজ্যসভায় বিল পাশের জন্য এখন ভরসা রাখতে হচ্ছে এনডিএ-র বাইরে ‘বন্ধু’দের উপরে।
বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘বাজেট পেশের পরে নবীন, চন্দ্রশেখর রাও, জগন রেড্ডির সাংসদদের উপরে ভরসা রাখতে হবে বিল পাশের জন্য। তাঁরা সঙ্গে এলেই রাজ্যসভায় আপাতত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব। সকলে উপস্থিত থাকলে ১২৯ জনের সমর্থন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কোনও বিল পাশের সময় সকলেই থাকবেন, সেটি ধরে নেওয়া ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করা হবে বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরানোর।’’