অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
হাতে মাত্র তিন মাস সময়। ওই সময়ের মধ্যে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়া তিনটি বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রের শাসক বিজেপি। সেই লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে আজ থেকে শুরু হয়ে গেল স্থায়ী কমিটির বৈঠক। যা চলবে টানা শনিবার পর্যন্ত। সরকারের এই অতিউৎসাহ দেখে বিরোধীদের প্রশ্ন, ওই বিল নিয়ে এত তাড়া কিসের? গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি নিয়ে বরং বিস্তারিত আলোচনা করা হোক। বিজেপির জবাব, যে ভাবে বিরোধীরা বিলটিকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চাইছেন, তা আসলে বিল পাশ করাতে অনাবশ্যক দেরি করানোর কৌশল। যাতে শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি সংসদে পেশ করতে ব্যর্থ হয় নরেন্দ্র মোদী সরকার।
বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম-নামে তিনটি বিল লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে আনা ওই বিলটি লোকসভায় পেশ করেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির কাছে আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক হয়, তিন মাসের মধ্যে সব শিবিরের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদে রিপোর্ট জমা দেবে স্থায়ী কমিটি। কিন্তু আজ থেকে শুরু হওয়া আলোচনার প্রথম ঘণ্টাতেই নানা আপত্তি তোলেন বিরোধী জোটের দুই শরিক তৃণমূল ও ডিএমকে। এই আপত্তিতে ক্ষুব্ধ বিজেপির বক্তব্য, সংস্কারধর্মী ওই তিনটি বিল নিয়ে আলোচনা ইচ্ছাকৃত ভাবে ‘ঢিমে’ করতে চাইছেন বিরোধীরা। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘বিরোধীদের কারণে আজ ওই তিনটি বিল নিয়ে এক ঘণ্টা পরে আলোচনা শুরু হয়। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লা ওই বিল নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও তাঁকে বাধা দিয়ে বক্তব্য রাখেন ডিএমকে সাংসদ দয়ানিধি মারান।’’
ইন্ডিয়া জোটের পাল্টা বক্তব্য, সরকার একতরফা ভাবে বিরোধীদের কোনও মতামত না শুনেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ওই বিলগুলি পাশ করিয়ে নিতে চাইছে। যেমনটি তারা সংসদে অন্য বিল পাশের ক্ষেত্রে করে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে হেতু বিলগুলি দেশের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত এবং কোনও স্থানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপরে বর্তায়, তাই সূত্রের মতে, ডিএমকে নেতা দয়ানিধি মারান বৈঠকে দাবি করেন, সরকারের উচিত প্রতিটি রাজ্যে গিয়ে প্রশাসন ও বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের মতো সব পক্ষের সঙ্গে বিলগুলি নিয়ে বৈঠক করা। সূত্রের মতে ওই বিলগুলির শিরোনাম হিন্দিতে হওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন মারান। সমর্থন করেন জেডিইউ, তৃণমূল এমনকি কংগ্রেসের এক হিন্দিভাষী সাংসদও।
বিরোধীদের মতে, ওই তিনটি বিলকে ঘিরে সরকারের ‘সন্দেহজনক’ তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওই তিনটি বিল দেশের আইনব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিতে চলেছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ ওই বিলগুলি বাদল অধিবেশের শেষ দিনের শেষ ঘণ্টায় লোকসভায় পেশ হয়। যার কোনও উল্লেখ ছিল না দৈনিক কাজের তালিকায়। পেশ করেই তা আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে। সংসদীয় কমিটিকেও তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে সরকারের বিল পাশ করার প্রশ্নে ক্ষিপ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি জানতে চান, বিল পাশ করাতে কিসের এত তাড়া সরকারের? পুরনো যে আইন ছিল, তাতে সংশোধনী আনলেই কি লক্ষ্য পূর্ণ হত না?
বিজেপির বক্তব্য, বিলটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অমিত শাহ দেশের সব রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে কী ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন, তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠান। পরের বছর দু’বার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সব হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের কাছেও পরামর্শ চায় কেন্দ্র। সরকারের দাবি, ইতিমধ্যেই ৩২০০ লোকের মতামত নেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসে আরও কয়েকশো লোকের বক্তব্য শুনবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। যদিও রাজ্যে-রাজ্যে সফর করে বিলগুলি নিয়ে পরামর্শ শোনার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন কমিটির বিজেপি সদস্যরা। তাঁদের বক্তব্য, এর প্রশ্নই উঠছে না।