অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
নজিরবিহীন!
বাংলায় প্রথম বারের জন্য এক সঙ্গে উপস্থিত হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। একই দিনে, একই সময়ে, একসঙ্গে বিজেপির দুই সর্বোচ্চ নেতার উপস্থিতির কথা জেনে প্রথমটায় হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন রাজ্য বিজেপির পোড় খাওয়া নেতারাও। অনেকের কাছেই স্পষ্ট ছিল না এমন ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সফরের কারণ। সূত্রের খবর, রাজ্যে দু’দফার বৈঠকে বিজেপি নেতাদের সামনে আগাগোড়া কড়া ভূমিকায় ছিলেন শাহ। নড্ডা তাঁর সহকারী।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দলীয় সেনাপতি ছিলেন তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি শাহ। কিন্তু এখন তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দলের দায়িত্ব রয়েছে নড্ডার হাতে। তবে বিজেপির অন্দরেই এই চর্চা রয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে নড্ডা সভাপতি হলেও এখনও বিজেপির ‘ভোট-কুশলী’ সেই শাহই। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, নড্ডাকে সঙ্গে করে এনে রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শাহের সাংগঠনিক বৈঠকে বসা এক দিকে বিজেপির কাছে এ বারের ভোটে বাংলার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিল। তেমনই বিরোধীদেরও বার্তা দেওয়া হল, পূর্ণ শক্তিতে এ রাজ্যে ভোটে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির।
কিন্তু বাংলায় কেন দুই শীর্ষ নেতা একসঙ্গে? কেনই বা শীর্ষ নেতাদের কাছে বাংলার এত গুরুত্ব? বিজেপির একটি সূত্রের বক্তব্য, গত বছর হায়দরাবাদে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকেই রেকর্ড আসনে জিতে তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। তবে দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে ইঙ্গিত, বেশ কিছু রাজ্যে এ বার তাদের আসন কমতে পারে। তাই সেই ঘাটতি মেটাতে তাদের বাড়তি নজর বাংলা, তেলঙ্গানা ও ওড়িশা। সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে তেলেঙ্গানায় ফলাফল খুব একটা আশাপ্রদ না হওয়ার পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিধানসভায় তিন থেকে ৭৭ আসনে পৌঁছনো বাংলার ‘দর’ বেড়েছে। এমনিতেই নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করলে রাজ্যে পর পর প্রচারসভা করতে আসবেন শাহ, নড্ডারা। তবে শুধু সেটাই নয়, এই ধরনের সাংগঠনিক বৈঠকগুলোও যে চলবে, তা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, কলকাতার বৈঠকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ‘অসন্তুষ্ট’ হয়েছেন শাহ। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’, ‘ভোট লুট’ নিয়ে রাজ্য বিজেপির অভিযোগ থাকলেও দলকে আত্মসমীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, তৃণমূল ভোট লুট করে থাকলে তাতেও বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বোঝা যাচ্ছে বলে শাহ মনে করছেন। অর্থাৎ দলের এখনও বুথ আগলানো বা সন্ত্রাস প্রতিরোধ করার মতো সাংগঠনিক সামর্থ্য হয়নি।
শাহদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকের দ্বিতীয় দফায় ডাক পেয়েছিলেন মূলত সাংসদেরা। সূত্রের খবর, বৈঠকে শাহ আরও কড়া সুরে সাংসদদের সরাসরি নিশানা করে বলেন, তাঁরা আদৌ তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কি না! তিনি প্রশ্ন তোলেন, সাংসদেরা পাঁচ বছর কী করেছেন, বলতে পারবেন? তাঁরা জানেন, মোদী সরকারের কতগুলো প্রকল্প চলে? তাঁরা কতটা সময় দেন লোকসভা কেন্দ্রে? মোদী সরকারের সাফল্যের বিষয়ে তাঁরা কতটা জনগণকে জানিয়েছেন? তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল নেতারা গ্রেফতার হবেন আর তাঁরা ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন, তা হবে না!
শাহের কড়া বার্তার পরেই বুধবার তড়িঘড়ি রাজ্য বিজেপির পদাধিকারী ও জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন দলের শীর্ষ নেতারা। সূত্রের খবর, ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন’-এর মাধ্যমে সম্প্রতি তিন রাজ্যের নির্বাচনে কী ভাবে সাফল্য এসেছে, তা দেখানো হয়েছে। তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই বৈঠককে নিয়মমাফিক বলেই দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি একটি সাংগঠনিক দল। এই দলে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য নেতাদের বৈঠক ডাকতে হয়। সেই কারণেই এই বৈঠক।’’ শাহের বৈঠক নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সমাজমাধ্যম স্বেচ্ছাসেবকদের বৈঠকেই উনি ওঁর বার্তা স্পষ্ট করেছেন। আমাদের লক্ষ্য ৩৫ আসনের। এই মুহূর্তে ৩৫ ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও শব্দ বা সংখ্যা নেই!’’