Amit Shah

চিঠি-প্রতিবাদ, তবু শাহ অটল ন্যায় সংহিতায়

বিরোধী শিবিরের সাংসদদের অভিযোগ, এই সব বিলের মাধ্যমে মোদী সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ঘুরপথে ফেরাচ্ছে। পুলিশের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩৯
Share:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

ভারতীয় দণ্ডবিধি বদলে দ্রুত নতুন আইন আনা রুখতে কেন্দ্রীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লড়ে যাচ্ছেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সদস্য সাংসদরা। তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই লড়াই কত দিন তাঁরা চালিয়ে যেতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আজও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী-সহ বিরোধী সদস্যেরা।

Advertisement

তবে ঠিক তখনই হায়দরাবাদে নতুন আইন আনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসে ফুটতে দেখা গিয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সরকারের দু’নম্বর ব্যক্তিত্ব অমিত শাহকে। শাহের বক্তব্য, ‘খুব শীঘ্রই (শীতকালীন অধিবেশনে) ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম সংক্রান্ত বিল পাশ হয়ে যাবে।’ তাঁর বক্তব্য, ‘ব্রিটিশদের তৈরি করা আইন দূরে সরিয়ে ভারত নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন যুগে পদার্পণ করবে নতুন ন্যায় সংহিতার হাত ধরে।’

সূত্রের খবর, গত সন্ধ্যায় এই সংক্রান্ত খসড়া রিপোর্টের হিন্দি অনুবাদ কমিটির সদস্যদের কাছে পৌঁছেছে। বৈঠক ছিল আজ দুপুরে। কালই সন্ধ্যায় কমিটির চেয়ারম্যানের সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ফোন পান বিরোধী দু’টি বড় দলের দুই সাংসদ। তাঁদের আশ্বস্ত করার ঢংয়ে বলা হয়, শুক্রবার এই রিপোর্ট পাশ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। হিন্দি অনুবাদটি আসতে যে দেরি হয়ে গিয়েছে সে কথা তাঁরাও মানছেন। ফলে আগামী ৬ নভেম্বর ফের বৈঠক ডেকে এটি পাশ করানো হবে।

Advertisement

আজ তাই কার্যত দু’মিনিটের মধ্যেই সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষ হয়ে যায়। তার মধ্যেই নিজেদের অবস্থানে অটল থেকে কংগ্রেস, তৃণমূলের সদস্যেরা জানান, এত তাড়াহুড়ো করায় তাঁদের আপত্তি থেকেই যাচ্ছে। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ এবং অধীর চৌধুরী আজ ‘ডিসেন্ট নোট’ জমা দিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে।

ডেরেক কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজ লালকে একটি চিঠি দিয়েছেন আজ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘স্বল্পমেয়াদি নির্বাচনী ফায়দা তোলার জন্য এই বিলগুলিকে গুঁড়িয়ে দেবেন না। এই বিষয়টির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের সবার সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। সমস্ত রাজনীতি সরিয়ে রেখে কমিটিকে এক দিন বা এক সপ্তাহ নয়, অন্তত তিন মাস সময় দেওয়া হোক, এই বিলগুলি বিবেচনা করার জন্য।’ পরে তিনি বলেন, “আমি এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করছি, এই বিল বাতিল করার জন্য। বাতানুকূল ঘরে বসে এই বিষয়ে শেষ কথা বলা যায় না।”

তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, এই তিনটি বিলের খসড়া রিপোর্ট আজ পাশ না করানো বিজেপির রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়। এমনটা নয় যে তারা বিরোধীদের দেওয়া সব প্রস্তাব রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করবে। কিন্তু তারা বাইরে দেখাতে চাইছে যে, সমস্ত বিরোধী দলকে বলার এবং তাদের কথা শোনার জন্য যথেষ্ট সুযোগ ও সময় দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদের বক্তব্য, যা আসলে ‘যথেষ্ট’ নয়।

তবে তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, সাক্ষ্য অধিনিয়ম সংক্রান্ত বিলে যে প্রস্তাবগুলি বিরোধীরা দিয়েছিল, সেগুলি খসড়া রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করেছে কমিটি। এই বিলটি নিয়ে তাদের সমস্যা নেই।

বিরোধী শিবিরের সাংসদদের অভিযোগ, এই সব বিলের মাধ্যমে মোদী সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ঘুরপথে ফেরাচ্ছে। পুলিশের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে। এ ছাড়া, তিনটি বিলের ৯৫ শতাংশই পুরনো আইনের হুবহু নকল। ঔপনিবেশিকতার দোহাই দিয়ে পুরনো আইন বদলানোর যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিলের কিছু ধারা আরও বেশি ঔপনিবেশিক।

প্রসঙ্গত, সংসদের বাদল অধিবেশনের একেবারে শেষ দিন, আচমকাই অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেছিলেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ফৌজদারি দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং সাক্ষ্য আইনের বদলে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম চালু করার জন্য তিনটি বিল পেশ করা হয়।
এর পর বিলগুলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement