মঙ্গলবার সকালে এখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। নিজস্ব চিত্র।
দেড় দিনের মধ্যে ফের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল গলসিতে। রবিবার রাতে আটপাড়া গ্রামের পরে, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গলসির ১ ব্লকের রাইপুর। একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িটির একাংশ। মজুত বোমা ফেটে গিয়েই এমনটা ঘটেছে, মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাইপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার পাকা বাড়ি তৈরি করছেন স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রফিকুল। পেশায় রাজমিস্ত্রি রফিকুল এক সময়ে কেরলে কাজ করতেন। গত বছর লকডাউনের সময়ে গ্রামে ফেরেন। তার পরেই গ্রামের শেষ প্রান্তে বাড়ি তৈরি শুরু করেন। প্রায় চার ফুট দেওয়াল তোলার পরে, গাঁথনির কাজ আর এগোয়নি। বালি ভরাট করে রাখা ছিল নির্মাণ করা অংশটি। এ দিন সেখানেই বোমা ফাটে। ইটের দেওয়ালের কিছুটা ভেঙে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অনেকের দাবি, বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের কয়েকটি বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলে স্প্লিন্টার ও সুতলি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। তবে কেউ হতাহত হননি। স্থানীয় বাসিন্দা রুনা খাতুন, শেখ নওসারদের দাবি, ‘‘ওই জায়গায় পাড়ার ছোট ছেলেমেয়েরা সকাল-বিকেল খেলা করে। ঘটনার সময়ে ওখানে কেউ ছিল না, তাই বড় দুর্ঘটনা থেকে রেহাই মিলেছে!’’ তাঁদের দাবি, যে বা যারা ওখানে বোমা রেখেছে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা হোক।
এ দিন এলাকায় রফিকুলের দেখা মেলেনি। ঘটনার সঙ্গে ছেলের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন তাঁর মা শাকিলা বিবি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছেলে অন্য গ্রামে কাজ করতে গিয়েছে। আগে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। এখন এলাকায় কাজ করে। রাজনীতি করে না। টাকার অভাবে ঘর তৈরির কাজও বন্ধ রয়েছে।’’
রাইপুরের কাছেই আটপাড়া গ্রামে শেখ ফটিক নামে এক ব্যক্তির বাড়ির উঠোনে বোমা ফাটে রবিবার রাতে। ফটিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে মজুত বোমা ফেটে উড়ে গিয়েছিল আটপাড়ার একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শৌচাগার। ভোটের মুখে পরপর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সহ-সভাপতি রমেন শর্মার অভিযোগ, “ভোটে সন্ত্রাস তৈরি করতে গলসিতে প্রচুর বোমা মজুত করা হয়েছে, এ কথা আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি। পরপর দু’দিনের ঘটনা তা প্রমাণ করছে।’’
যদিও এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি তৃণমূলের। দলের জেলা সহ-সভাপতি জাকির হোসেন দাবি করেন, ‘‘ওই গ্রামে আমরা বহু ভোটে এগিয়ে থাকব। ওখানে আমাদের বোমা মজুত করার কোনও কারণ নেই। পুলিশ তদন্ত করছে। আশা করি, দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হবে।’’
পুলিশের দাবি, বালি গরম হয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে মজুত করে রাখা বোমা ফেটে বিস্ফোরণ ঘটেছে। কে বা কারা ওখানে বোমাগুলি রাখল, তদন্ত হচ্ছে। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাবাসাবাদ করা হচ্ছে।