ভোটের পরেও ছোটাছুটি থামছে না তজমুলের

ভোট কবেই শেষ হয়েছে! কিন্তু এখনও ছুটেই চলেছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী তজমুল হোসেন। জলকাদা মাড়িয়ে কখনও ধানখেত, পাটখেতে, তো কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে আমবাগানে কোনও বাসিন্দার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০২:৫২
Share:

চিন্তায় তজমুল।—নিজস্ব চিত্র

ভোট কবেই শেষ হয়েছে! কিন্তু এখনও ছুটেই চলেছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী তজমুল হোসেন। জলকাদা মাড়িয়ে কখনও ধানখেত, পাটখেতে, তো কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে আমবাগানে কোনও বাসিন্দার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে। নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকে এ ভাবেই ছুটতে শুরু করেছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল প্রার্থী।

Advertisement

নির্বাচনের আগে না হয় ভোট প্রার্থনার জন্য ছুটতে হয়েছিল। কিন্তু ১৭ এপ্রিল পার হওয়ার পরেও স্বস্তিতে বিশ্রাম না নিয়ে নিয়ম করে কেন ছুটে বেড়াতে হচ্ছে তাকে? হাত-মাথা নেড়ে তজমুল সাহেবের অবশ্য দাবি, ‘‘কোনও টেনশন নেই। জয় সুনিশ্চিত। কিন্তু ফল বের না হওয়া পর্যন্ত সবার মধ্যেই একটা উত্কন্ঠা থাকে। আমিও তার বাইরে নই।’’

কিন্তু তজমুল সাহেব যাই বলুন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হরিশ্চন্দ্রপুরের দু’বারের বিধায়ক যে এতটুকুও স্তস্তিতে নেই, দলীয় সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। কেননা আগে দু’বার তিনি ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক। নির্বাচনের কিছু দিন আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। আর তাই নির্বাচনের আগে তাকে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি সিংহ নয়, এবারে তার প্রতীক যে ঘাসফুল তা জানাতে বাড়তি ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। সোজা কথায়, তর সইছে না বলে নিজের মতো করে ভোটের পরে এলাকা ঘুরে সমীক্ষার জন্যই এখন ছুটে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে।

Advertisement

দল সূত্রে জানা যায়, গত দু’বার বিধানসভার নির্বাচনে শাসকদলের প্রার্থী হয়েই জয়ী হয়েছিলেন তিনি। এ বারও শাসকদলের প্রার্থী তিনি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। গত বিধানসভায় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রবল তৃণমূলী হাওয়াতেও বেগ পাননি। কিন্তু এবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর নতুন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য খুব একটা সময় পাননি। এ ছাড়া গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কমবেশি সমস্যা রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরেও। নির্বাচনের কিছু দিন আগে ওই আসনের দাবিদার দলের এক নেত্রী তো ফেসবুকে এমন মন্তব্যও করেছিলেন যে দল ১৭ লক্ষ টাকা নিয়ে তজমুল সাহেবকে টিকিট দিচ্ছে। যদিও তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কেউ ওই মন্তব্য করেছেন বলে সেই নেত্রী দাবি করেছিলেন। তাই এমন আবহে নতুন দলে এসে দলের উপরে যতটা নয়, নিজের মেশিনারির উপরেই ভরসা করেই লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন। নিজের মেশিনারি বলতে তার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা পুরনো কিছু লোকজন। লড়াই সহজ নয় আঁচ করে নিজের মতো করে খেতের চাষি থেকে শুরু করে অবলীলায় কংগ্রেস-সহ পুরনো দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতেও ঢুকে ভোটপ্রার্থনা করছেন।

আর ১৭ এপ্রিলের পরেও সেই ছোটার বিরাম নেই। প্রতিদিন ভোর চারটেয় ওঠা তজমুল সাহেবের অভ্যাস। তারপর নমাজ সেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফিরে আসছেন হরিশ্চন্দ্রপুরে। হরিশ্চন্দ্রপুরে পারিবারিক কাপড়ের বড় ব্যবসা রয়েছে তাঁদের। সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানে বসেও চালাচ্ছেন সেই সমীক্ষার কাজ। রাতে ফের তিন কিলোমিটার দূরের বাংরুয়ায় ফিরে বিশ্রাম। বিরোধীদের অবশ্য টিপ্পনী, ১৯ এপ্রিলের পর তজমুল সাহেবকে আর ছুটতে হবে না। তাই এখন থেকে বরং কাপড়ের ব্যবসায় মন দিলেই তাঁর মঙ্গল। তজমুল সাহেবের অবশ্য দৃপ্ত ঘোষণা, ‘‘ব্যবসা করেই আমার সংসার চলে। ওটাই সব। রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আমার নিজের সমীক্ষা বলছে জয় সুনিশ্চিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement