ফোনে ফোনে ব্যবস্থা সারছেন তৃণমূল নেতা। নিজস্ব চিত্র।
ঠিক সন্ধের মুখে শ্যামসুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি বুথে ঢুকলেন আট জন ভোট কর্মী। সঙ্গী দুই রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল। তাঁদের সঙ্গেই বুথে ঢোকেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিও।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই মোটর বাইকে চেপে বুথের মধ্যে ঢুকে এলেন এক তৃণমূল নেতাও। ভোটকর্মীদের কী কী সমস্যা জানতে চাইলেন সবিনয়ে। ইতিমধ্যে বুথে ঢুকে পড়েছেন ওই নেতার অনুগামী কিছু যুবক। মাটির মেঝেতে গর্ত, নিচু অ্যাজবেসটাসের চালা, ভ্যাপসা গরম, নলকূপের জল, নেই বালতি-মগ, নোংরা শৌচাগার— অনুযোগের শেষ নেই। শহর থেকে আসা ভোট করাতে আসা সরকারি কর্মীরা কেউ কেউ সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়ের ভয়ে উসখুসও করছেন।
সব শুনে তৃণমূল নেতা বললেন, “কিচ্ছু চিন্তা করবেন না স্যার। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনারা আমাদের গ্রামে এসেছেন। গ্রামের বদনাম হতে দেব না।” দু’টি বুথেই হাজির পাঁচজন সিআরপিএফ কর্মী। বাংলা কিছুই বোঝেন না তাঁরা। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন দূরে।
ছবিটা দাঁতন-২ ব্লকের সাউরি কোটবাড় পঞ্চায়েত এলাকার। সোমবার ভোটের আগে ভোটকর্মীদের তুষ্ট করতে দেখা গেল ওই শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ মালকে। রবীন্দ্রনাথবাবু আবার ক্ষুদ্র সেচ দফতরের কর্মী। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, “আমি ভোটের ডিউটি নিইনি। এলাকাটা একটু দেখতে হবে তো।”
স্কুলের পঞ্চাশ মিটারের মধ্যেই তৃণমূলের বুথ কমিটির কার্যালয়। কমিশনের নির্দেশ মেনে তার গায়ের দেওয়াল লিখন সদ্য মুছে দেওয়া হয়েছে। কর্মীরা আবার আবদার করলেন, ওখানেই তাঁরা ক্যারম খেলবেন। পার্টি অফিসে খেললে কে আপত্তি করবে? শুরু হল ফোন। নেতার হাঁকডাকে একের পর এক ব্যবস্থা হয়ে গেল।
ওই দুই বুথের দুই প্রিসাইডিং অফিসার তুফান কুমার পাণ্ডা ও পবিত্র মহাপাত্রকে অবশ্য এই সব বন্দোবস্তে সংকোচ করেনি। ভোটকর্মীরাও অকপটে জানিয়েছেন, “এই অব্যবস্থা কে দেখে দেবে! আমরা তো কাউকে চিনি না। কে কোন দলের লোক আমাদের জানার দরকার নেই। সাধারণ সহযোগিতাটুকু নিতে আপত্তি কোথায়?”
প্রশাসন কিন্তু জানিয়েছে, বুথে গিয়ে তাঁরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ছেন কিনা সে বিষয়ে নজর রাখছে কমিশন। কোথায় নজরদারি? চোখে পড়েনি আনন্দবাজারের।