হুমকি উড়িয়েও বুথমুখী, আক্রান্ত ক্যানিঙের মহিলা

শাসক দলের হুমকির মুখে রুখে দাঁড়ানোই হোক বা মার খেয়েও নিজের ভোট নিজের ভোট নিজে দেওয়ার জেদ— এ বার রাজ্যের ভোটে মহিলারাই বার বার প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

আক্রান্তদের দেখতে হাসপাতালে কংগ্রেস প্রার্থী অর্ণব রায়। ছবি: সামসুল হুদা।

শাসক দলের হুমকির মুখে রুখে দাঁড়ানোই হোক বা মার খেয়েও নিজের ভোট নিজের ভোট নিজে দেওয়ার জেদ— এ বার রাজ্যের ভোটে মহিলারাই বার বার প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ভোট মিটতেই আক্রমণের শিকারও হচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের অর্ণব রায়কে ভোট দেওয়ার ‘অপরাধে’ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিরোধী দলের লোকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের দলের লোকজনের বিরুদ্ধে। রবিবার বিকেলে ক্যানিঙের হাটপুকুরিয়া অঞ্চলের দেবিশাবাদের এই ঘটনায় ৭ জন মহিলা, ১ কিশোরী-সহ জখম হয়েছেন কয়েক জন। আহতদের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তানজিলা লস্করের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

অভিযোগ, ভোটের আগে থেকেই ওই গ্রামের বিরোধী দলের সমর্থক পরিবারগুলি যাতে ভোট দিতে না যায়, সে জন্য হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল। ভোট মিটতেই রবিবার বিকেলে বাড়ি বাড়ি চড়াও হয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনায় তানজিলা লস্কর, মিনারা লস্কর, মাসুদা লস্কর, রেহেনা লস্কর, ইসমাতারা লস্কর, নাজমা লস্কর, সাবানা লস্কর, তনুজা লস্কররা গুরুতর জখম হন।

Advertisement

তানজিলা, ইসমাতারা জানান, ভোট দিতে গেলে বাড়ির বাইরে বেরোতে দেবে না বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। রবিবার বছর সাতেকের তনুজা বাড়ির বাইরে খেলছিল। তাকে তৃণমূলের দু’জন অকারণ বকাবকি শুরু করে। তনুজার দিদি রেহেনা প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর শুরু করে। গ্রামের মহিলারা রুখে দাঁড়ান। তখনই তাদের মারধর করা হয়। হামলাকারীরা বলে, ‘বারণ করার পরেও তোরা ভোট দিতে গিয়েছিলি। তোদের সব বোমা মেরে উড়িয়ে দেবো!’’

অর্ণববাবু বলেন, ‘‘ওরা মানুষের গণতন্ত্রান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। ভোট মিটতেই আমাদের লোকজনকে মারধর করছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা পরিষদের তৃণমূলের সহ সভাধিপতি শৈবাল লাহিড়ি বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। একটি রাস্তা নিয়ে গ্রাম্য বিবাদের কথা কাটাকাটি থেকে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। বিরোধীরা এ নিয়ে মিথ্যা রাজনীতি করছে।’’

ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী অর্ণব রায়ের সমর্থনে দিঘিরপাড় বুথে এজেন্ট হয়েছিলেন পবিত্র নস্কর। এ দিন সন্ধ্যায় তিনি বাজারে এলে হাসপাতাল মোড়ে তাঁকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। বাসন্তীর আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্করকে ভোট দেওয়ার ‘অপরাধে’ ফুলমালঞ্চ অঞ্চলের খেড়িয়ায় মোজাম্মেল সর্দারের চায়ের দোকান ও সাজাউদ্দিন সর্দারের মুদির দোকান তৃণমূলের লোকজন বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। ওই পঞ্চায়েতের ওস্তাগারপাড়ায় আরএসপি করার ‘অপরাধে’ নওসের শেখকে মারধর করা হয়। আঠারোবাঁকিতে সুভাষবাবুর এজেন্ট হওয়ায় এসার আলি ঘরামি, মান্নান বৈদ্য, নুর ইসলাম শেখকে হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। সব ক্ষেত্রেই অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

সাগরেও এক সিপিএম কর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গোপাল জানা নামে ওই সিপিএম কর্মীকে রুদ্রনগর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় সাগরের হরিণবাড়ি বাজারের ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার নরহরিপুর গ্রামের সিপিএম কর্মী গোপাল জানা ও তাঁর পরিবারের উপরে ভোটের আগে থেকেই শাসক দলের নেতারা হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। বলা হচ্ছিল, যাতে ওই পরিবারের কেউ সিপিএমের হয়ে প্রচার না করে, বুথে না যায়। কিন্ত হুমকি উপেক্ষা করেই ওই এলাকার ৭৫ নম্বর বুথ সামলেছেন ওই যুবক ও তাঁর পরিবারের লোকজন।

সোমবার সন্ধ্যায় গোপালের পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, তাঁকে শাসক দলের দলীয় কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

সিপিএমের প্রার্থী অসীম মণ্ডলের অভিযোগ, সিপিএম করার অপরাধে মারধর করা হয়েছে গোপালকে। পুলিশ-প্রশাসনকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। তবে তৃণমূল ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাত পর্যন্ত লিখিত দায়ের হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement