খোসমেজাজে রামপুরহাট কেন্দ্রের তিন মহারথী। ছবি : সব্যসাচী ইসলাম
শহরের পাঁচ মাথা মোড়। হাইমাস্ট লাইটের উজ্জ্বল আলোর নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কেউ চায়ের দোকানে কেউ বা স্টেশনারী দোকানের সামনে কেউ বা মিষ্টির দোকানের সামনে আড্ডা দিচ্ছেন। রাত দশটা তেও ভোট পরবর্তী বিশ্লেষণ চলছে।
একজন তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নাই, উন্নয়নের সঙ্গে নাই, ১৬ দিনে কি এমন করল যে জিম্মিদা জিতে যাবে? আর তাই যদি হয় তাহলে তো আশিসদাকে রাজনীতি করা ছেড়ে দিতে হবে!’’ দলের ওই কর্মীর প্রশ্ন শুনে রামপুরহাট বিধানসভা থেকে জয়ী হওয়া আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন দলীয় কর্মী যথার্থই প্রশ্ন করেছেন। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে অবশ্য তিনি বলছেন, ‘‘আগে দু’বার হেরে গিয়ে ২০০১ সালে তৃতীয়বার যখন প্রার্থী হয়েছিলাম তখন ভেবে ছিলাম এবারে যদি হেরে যাই তাহলে আর যাই হোক ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। সেবার তৃণমূলের হয়ে প্রথমবার প্রার্থী হয়েছিলাম তাই টেনশন ছিল। আবার ২০০৬ সালেও টেনশন ছিল। ২০১১ সালে শহরের ভোট নিয়ে কিছুটা টেনশন ছিল। কিন্তু সেই শহরবাসী আমাকে ভালবেসে ভোট দিয়ে জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছিল।”
কেমন আছেন, কোনও টেনশন?
প্রশ্ন শুনে আশিসবাবুর সহাস্য উত্তর, ‘‘নো টেনশন!’’
তবুও পরীক্ষা তো অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। ফল বের হতে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই যে টানাপোড়েন, কি বলবেন?
আশিসবাবুর জবাব, ‘‘যত দিন যাচ্ছে এক এক জন এমন অঙ্ক নিয়ে আসছে সেই অঙ্ক গুলোই হিসাব গুলিয়ে দিচ্ছে। একজন কর্মী আমাকে বলছেন অমুক বুথে আমার পাঁচ হাজার লিড হবে। আমি তখন তাঁকে বলছি, আরে ভাই যে বুথের কথা আপনি বলছেন সেই বুথে কত ভোটার আছে বলুন তো। সঠিক জবাব দিতে পারেনি। আসলে অনেকে না জেনে শুনে অঙ্ক বিশারদ হয়ে অঙ্ক কষছে। যার জন্য অনেক সময় বিভ্রান্তি লাগছে— এই যা!”
ভোট মিটলেও ও দিকে কংগ্রেস প্রার্থী জিম্মি পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকার পর দিন কয়েক থেকে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। কেমন হবে?
জিম্মি বলছেন, ‘‘ওরা ১৬ দিন কেন বলছে বুঝতে পারছি না? এক দিন রাজবব্বর, আর একদিন তো অধীরদা, আবার আর একদিন সনিয়া গাঁধীর সভা ছাড়া আর এক দিন তো মনোনয়নপত্র দাখিল করতে চলে গিয়েছিল। সর্বসাকুল্যে ভোটের আগের ১২ দিন মাত্র প্রচারের সময় পেয়েছিলাম!’’ টেনশনে?
কথায় কথায় জিম্মির জবাব, ‘‘অনেক দিন থেকে ভোট করছি। ভোট হচ্ছে অনেকটা উৎসবের মতো। তাই উদ্বেগ বা উৎকুন্ঠা কিছু নেই। জেতা হারার চেয়ে মানুষের কাছে থেকেছি, এখনও তাঁদের পাশে থেকে সেবা করে যাচ্ছি, আগামী দিনেও থাকব।” আত্মবিশ্বাস দেখে বোঝা যায় নেতা ফুরফুরে মেজাজে আছেন। একটু পরেই মোবাইলে ওপারে কাউকে যা বললেন, অন্তত তাতে প্রমাণ মিলল তেমনই। বললেন, ‘‘জিতব গো, জিতব! টেনশন নিও না।’’
ভোট পার হয়েও নিজের নিজের মতো করে অঙ্ক কষে অন্য প্রার্থীরাও নিজেদের এগিয়ে রাখতে চান।
জনসংযোগে চিড় ধরাতে চাইছে না রামপুরহাট বিধানসভার এবারের তিন নির্ণায়ক প্রার্থীরাও। যদিও বিজেপি-র দুধকুমার মণ্ডল ভোটের দিনই ভোট মিটে যাওয়ার পরেই সাংবাদিকদের কাছে দলীয় কর্মীদের একাংশের উপর দোষারোপ করেছিলেন। ভোট পরবর্তী দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় এখনও সেই ক্ষোভ মাঝে মাঝেই দুধকুমার মণ্ডলের গলায় উঠে আসে। জানালেন, ‘‘ভোটে একদল হারবে একদল জিতবে। তাই নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি না।’’
আদিবাসী গাঁওতা-র রবিন সোরেন অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘‘আদিবাসী খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে আমার লড়াই। এবং আমার যে উদ্দেশ্য তাতে আমি সফল পেয়েছি। প্রথমবার প্রার্থী হয়ে এটাই আমার বড় পাওনা।”
টেনশন হচ্ছে?
‘‘টেনশন! হ্যাঁ তা তো হচ্ছেই। আমি কত ভোট পাচ্ছি তাই টেনশনে ভুগছে সবাই। যেটা আমি খুব উপভোগ করছি। এলাকার মানুষের পাশে থেকে টেনশন ফ্রি।’
অন্য দিকে বামফ্রন্ট ঘোষিত প্রার্থী মহম্মদ হান্নান বলেন, “বাম ঐক্যকে চোখের মণির মতো আগলে রাখতে প্রার্থী হয়েছি। তাতে যেটুকু সমর্থণ পেয়েছি। সেটাই অনেকের কাছে চিন্তার কারণ!”