—প্রতীকী চিত্র।
একটি দল সরকারি ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করার পরে সেই প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। এক দল বর্তমান সাংসদকেই প্রার্থী করার কথা প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে। সরে দাঁড়ানো প্রার্থী এবং সাংসদ, দু’জনই এলাকার বাসিন্দা নন। রাজনৈতিক মহলের দাবি, আসানসোলে বড় সংখ্যক হিন্দিভাষী মানুষের ভোট টানতে হিন্দিবলয়ের তারকাদের এখানে প্রার্থী করার দিকে ঝুঁকছে দু’টি দল। এ নিয়ে নানা মহলে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও। তবে বিজেপি এবং তৃণমূলের দাবি, এ সব বিভাজনে মদত দেওয়ার চক্রান্ত।
১৯৫২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লোকসভা ভোটে আসানসোল থেকে নির্বাচিত সাংসদেরা সকলেই ছিলেন বাঙালি। ২০২২ সালে উপনির্বাচনে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা। এ বারও তাঁকেই প্রার্থী করা হতে চলেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তিনি প্রস্তুতিতেও নেমে পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি ভোজপুরি তারকা পবন সিংহের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তবে পবন আসানসোলে লড়বেন না জানিয়েছেন। বিজেপির নানা সূত্রের দাবি, এই কেন্দ্রে কোনও তারকা প্রার্থীরই সন্ধানে রয়েছে দল।
এই পরিস্থিতিতে ‘বাংলা পক্ষ’ সংগঠন বামেরা বাঙালি কাউকেপ্রার্থী করলে তাঁকেই ভোট দেওয়ার ডাক দিয়ে প্রচার শুরু করেছে। সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘এত দিন বাঙালি প্রার্থীরা জিতে এসেছেন। হিন্দিভাষীরাও তাঁদের ভোট দিয়েছেন। এখন কী এমন হল যে হিন্দিভাষীদের ভোট নিশ্চিত করতে অন্য রাজ্যের মানুষজনকে এখানে প্রার্থী করতে হচ্ছে? এই প্রবণতা বন্ধ করতেই আমরা সমাজমাধ্যমে আবেদন জানিয়েছি।’’ শিল্পাঞ্চলের সাহিত্যিক ও সঙ্গীতশিল্পী সমীপেন্দ্র লাহিড়ির মতে, ‘‘দিল্লির কাছে বাংলা বরাবরই অবহেলিত। নেতাজি থেকে, প্রণব মুখোপাধ্যায় বা জ্যোতি বসু, নানা জনের ক্ষেত্রেই তা প্রমাণিত।তাই এ রাজ্যে বাঙালি প্রার্থীর পাশে থাকা উচিত।’’
তৃণমূল এবং বিজেপি অবশ্য ভাষা নিয়ে বিভাজনের ঊর্ধ্বে ওঠার আর্জি জানাচ্ছে। তৃণমূলের হিন্দি প্রকোষ্ঠের জেলা সভাপতি সিন্টু ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘আসানসোল ‘ক্ষুদ্র ভারত’ হিসেবে পরিচিত। সারা দেশের বিভিন্নভাষার মানুষ এক স্রোতে মিশেএখানে সবাই বাঙালি হয়ে গিয়েছেন। তাই কোনও পক্ষের এমন বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি সর্বভারতীয় দল। প্রার্থীর একটাই পরিচয়, তিনি ভারতবাসী। ভাষা, প্রদেশ নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে বিজেপি বিরোধীদের কাজ।’’
সিপিএম প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দি সমাজ’-এর রাজ্য সভাপতি হেমন্ত প্রভাকরও মনে করেন, লোকসভা ভোট দেশের সার্বভৌম ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। বিজেপি সাম্প্রদায়িকতা ও ‘বাংলা পক্ষ’ প্রাদেশিকতার উস্কানি দিয়ে বিভাজন ঘটাতে চাইছে বলে তাঁর দাবি। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্যপার্থ মুখোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘বামেদের লক্ষ্য রাজ্যবাসীকেইপ্রার্থী মনোনয়ন করা। বিরোধী দলগুলিতে যোগ্য লোকের অভাব থাকায় অন্য জায়গা থেকে প্রার্থী আনতে হচ্ছে।’’