সূর্য সিং বেসরার ভোটের পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
ঘাটশিলার প্রাক্তন বিধায়ক তথা ঝাড়খণ্ড পিপলস্ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি সূর্য সিং বেসরাকেই জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসনে সমর্থন করছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। তবে কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবি ছাপিয়ে বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখেই লড়বেন সূর্য। এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের তিন জেলাকে (অবিভক্ত মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া) ঝাড়খণ্ডে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সওয়ালও শুরু করেছেন তিনি।
এই আবহে অস্বস্তিতে অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজ। অজিতপ্রসাদের কথায়, ‘‘সূর্যবাবু রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্যের কথা বলছেন। জঙ্গলমহলের জেলাগুলির নিজস্বতা রয়েছে। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে জঙ্গলমহলের স্বশাসনের দাবি জানাব।’’
বাংলার জঙ্গলমহলের জেলাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের দাবিটি পুরনো। সূর্য ভোটের আবহে জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীদের পুরনো সেই আবেগই উস্কে দিচ্ছেন। বুধবার রাঁচিতে এক বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ বার লোকসভা ভোটে বৃহৎ ঝাড়খণ্ড গঠনের দাবিতেই ঝাড়খণ্ড ও বাংলার আসনে ভোটে লড়বে তাঁর দল। বৃহস্পতিবার সূর্য বলেন, ‘‘মেদিনীপুর এখন তিন ভাগ হলেও পুরনো দাবি অনুযায়ী অখণ্ড মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অন্তর্ভুক্তির দাবিকে সামনে রেখে প্রচার হবে। আমাদের ইস্তাহারের প্রধান বিষয় ‘গ্রেটার ঝাড়খণ্ড’। সেই সঙ্গে বাংলার ওই এলাকায় সংবিধানের পঞ্চম তফসিল কার্যকর করে আদিবাসী এলাকা ঘোষণাও অন্যতম দাবি।’’
তবে কৌশলগত কারণেই সূর্যের নির্বাচনী পোস্টারে এ কথা থাকছে না। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘আদিবাসী মূলবাসী ভাই ভাই, এই নির্বাচনে হিসাব লিব পাই পাই’। আর প্রার্থীর পরিচয়ে লেখা, ‘কুড়মি-সহ হিতমিতান (শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু জনগোষ্ঠী) সমর্থিত নির্দল প্রার্থী’। আগামী রবিবার ঝাড়গ্রামে আদিবাসী কুড়মি সমাজের কর্মিসভায় আসছেন সূর্য। ওই দিন বিভিন্ন জনজাতি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
সূর্য ঝাড়গ্রামে প্রার্থী হওয়ায় আদিবাসী ও কুড়মি ভোট ভাগের প্রবল সম্ভাবনা। এতে, তৃণমূল না বিজেপি, কার সুবিধা হবে তা নিয়েই কাঁটাছেঁড়া চলছে উভয় শিবিরেই। উল্লেখ্য, আটের দশকে বিহার ভেঙে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাতে তৎকালীন ‘আজসু’ (অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) নেতা সূর্য সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন সূর্যের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার বাবা প্রয়াত নরেন হাঁসদাও। নরেন তখন ছিলেন নিরাল এনেম হোরোর নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড পার্টিতে। পরে তিনি পৃথক দল ‘ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)’ গড়ে তোলেন।
নরেনের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড হয়। তবে সূর্য ও নরেনদের দাবি আজও পূরণ হয়নি। তাঁরা চেয়েছিলেন মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার পাশাপাশি, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিও ঝাড়খণ্ডে থাকুক। সূর্যও এখন অবিভক্ত মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পাশাপাশি ওড়িশা ও বিহারের আদিবাসী এলাকাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে বৃহৎ ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছেন। তবে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-র নেত্রী চুনিবালা হাঁসদার মতে, ‘‘এত বছর পরে পুরনো বিষয় সামনে আনাটা স্রেফ নির্বাচনী চমক।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘পুরনো বিষয়কে সামনে এনে ভোট ভাগের চক্রান্ত হচ্ছে। এ সবের প্রভাব ভোটে পড়বে না।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর দাবি, ‘‘ভোট ভাগের উদ্দেশ্যেই শাসকদলের পরিকল্পনায় নতুন করে বাংলাকে ভাগে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে।’’