বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের কুলিয়ানার ভোটার তালিকা থেকে নাম সরল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের। মেদিনীপুর কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ এখন থেকে খড়্গপুর শহরের ভোটার। রেলশহরে এলে সাউথ ডেভেলপমেন্টের রেলবাংলোতেই থাকেন দিলীপ।
মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী জুন মালিয়া। কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ কে তা এখনও জানায়নি বিজেপি। যদিও বহুদিন আগে থেকেই নাম ছাড়াই দেওয়াল লিখতে শুরু করেছেন দিলীপ। লোকসভা ভোটে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটার হতে হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। তা হলে খড়্গপুরের ভোটার হলেন কেন? দিলীপের জবাব, ‘‘আমি ভোট দিতে যেতে পারি না। মেদিনীপুরের ভোটার নই বলে আমায় এলাকায় থাকতে দেয় না। পুরভোটের সময় মামলা করে দিয়েছিল। হুজ্জুতি এড়াতে আমি ভোটার কার্ডে ঠিকানা বদল করেছি।’’ ২০১১ সালে নির্বাচন কমিশনের নিয়মে বলা হয়েছিল, সাংসদ অন্য কেন্দ্রের ভোটার হলেও তাঁর সংসদ এলাকার অন্য কোনও নির্বাচনে তিনি থাকতে পারলেও ভোটকেন্দ্রিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকতে পারবেন না। ২০১৯ সালে খড়্গপুরের বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন তাই কার্যত তাঁর খড়্গপুরের বাংলোয় গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল সাংসদ দিলীপকে।
নিয়ম না আটকালেও ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর জনসংযোগের স্বার্থে তৃণমূলকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার হতে হবে। ২০১৪ সালে তৎকালীন তৃণমূল নেতা তথা তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী কাঁথির বদলে হলদিয়া শহরের ভোটার হয়েছিলেন। প্রার্থী হিসেবে দিলীপের নাম এখনও চূড়ান্ত না হলেও জনসংযোগে খামতি নেই তাঁর। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভোটের দিন ঘোষণার পরদিন, প্রথম রবিবারে প্রচারে দেখা যায়নি বিদায়ী সাংসদকে। দিলীপের ব্যাখ্যা, ‘‘আমি সাংসদ হিসেবে জনসংযোগের কাজ করছিলাম। এখনও নির্বাচনের আড়াই মাস বাকি। কত প্রচার করব? একটা রবিবারে কী যায় আসে। আমি ভারতের একমাত্র সাংসদ যে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের সব গ্রামে গিয়েছি। আমায় লোক দেখেছে, চেনে।’’
ভোটের সময়ে প্রায় প্রত্যেক বারই গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের কুলিয়ানা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়ানা ৪ নম্বরে সংসদে ভোট দিতে আসেন দিলীপ। ব্যতিক্রম গত পঞ্চায়েত ভোট। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটে দিলীপের বুথে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। ঝাড়গ্রাম জেলা নির্বাচনী দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উনি (দিলীপ ঘোষ) খড়্গপুরে ভোটার হিসেবে নাম তোলার জন্য ফর্ম -৮ ফিলাপ করেছেন। যার ফলে এখানে ফর্ম-৭ অটো জেনারেট হয়েছে।’’ দিলীপের ভাই হীরক ঘোষ বলছেন, ‘‘ দাদা খড়্গপুরে বেশি থাকেন। তাই ওখানে নাম তুলেছেন। এখানে ভোট দিতে এলে দাদার প্রায় তিন ঘণ্টা সময় নষ্ট হত।’’
এই ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘বিজেপির জঙ্গলমহলে অস্তিত্ব নেই। সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন দিলীপবাবু। আগে থেকে বুঝে গিয়েছেন বিজেপি গোহারা হারবে। তাই ভোটার তালিককে থেকে নাম সরিয়ে নিজের সম্মান বাঁচাতে চাইছেন। যাতে কেউ বলতে না পারে যে তাঁর এলাকায় বিজেপি হেরেছে।’’